ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সংঘাত শুরুর আড়াই মাসের মাথায় সাংবাদিকদের প্রাণহানি এই মাইলফলক ছাড়াল। গতকাল এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, ইসরাইলি বিমান হামলায় আল রাই এজেন্সির ডেপুটি ডিরেক্টর আহমেদ জামাল আল মাধউনের নিহত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে গাজার কর্তৃপক্ষ। গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস অনুসারে, তার মৃত্যুতে গাজায় নিহত সাংবাদিকের মোট সংখ্যা ১০১ জনে পৌঁছেছে।
ইসরাইলি বর্বর হামলায় গাজার ৫০টিরও বেশি মিডিয়া অফিস সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে আলজাজিরা আরবি’র ক্যামেরাম্যান সামের আবুদাকাও রয়েছেন।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টের ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি টিম ডসন গাজায় ‘অস্বাভাবিক বেশি সংখ্যক’ সাংবাদিক নিহত হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, আমরা ‘এমন কোনো সংঘাতে এত বিপুলসংখ্যক সাংবাদিকদের মৃত্যু দেখিনি।’
এর আগে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক মুহাম্মাদ আবু হায়েদি গত শনিবার গাজা শহরের পূর্বে তার বাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন বলে মিডিয়া অফিস জানায়। তার মৃত্যুর মধ্যদিয়ে গাজায় নিহত সাংবাদিকদের সংখ্যা ১০০ জনে পৌঁছায়।
পরে টেলিগ্রামে গাজার মিডিয়া অফিস জানায়, গাজা উপত্যকায় নৃশংস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে শুজাইয়া এলাকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় সাংবাদিক মোহাম্মদ আবু হায়েদির শহীদ হওয়ার পর থেকে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ১০০ জনে দাঁড়িয়েছে।
গাজার ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরাইলি হামলায় নিহত সাংবাদিকদের এই সংখ্যা আােবেশি হতে পারে। তবে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, আল জাজিরা আরবি’র ক্যামেরাম্যান সামের আবুদাকাসহ অন্তত ৬৯ জন সাংবাদিক এই সংঘাতে নিহত হয়েছেন। ১৯৯২ সাল থেকে সংঘাতে দায়িত পালনের সময় হতাহত সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ ও পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক এই সংগঠন। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরাইল।
ইসরাইলি বাহিনীর টানা আড়াই মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন।
সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরো ৫২ হাজার ৫৮৬ জন এবং এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৬ হাজার ৭০০ জন। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
