ঢাকা ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তারাগঞ্জের জনসভায় শেখ হাসিনা

বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কেউ অবহেলিত থাকবে না

বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কেউ অবহেলিত থাকবে না

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। জাতির পিতার এই দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে আমি হাসি ফুটাব। সেই লক্ষ্যেই আমরা বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর এই দেশে কোনো মানুষ অবহেলিত থাকবে না। এটাই আমার কথা, আর সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং করব। ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশের, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। এই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত দেশে গড়ে তুলতে চাই। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেই এ দেশ উন্নত দেশ হবে। আমরা টানা তিনবার ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে অনেক এগিয়ে নিয়েছি। আপনারা আবারও আমাদের ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিবেন। আপনারা আমাদের ভোট দিবেন আমরা আপনাদের উন্নত দেশ উপহার দিব।

রংপুরের তারাগঞ্জে গতকাল নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় দেশে আর কোনো ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার থাকবে না বলেও জানান তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল মুজিববর্ষে বাংলাদেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। যাদের ঘরবাড়ি নেই, জমি নেই, তাদের প্রত্যেককে দুই কাঠা করে জমি এবং বিনা খরচে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। আজকে আমাদের দেশের ৩৩টি জেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হয়েছে। আমি শুধু সরকারি হিসাব নয়, আমি কৃষকলীগের নেতাদের প্রত্যেকটা উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত তথ্য নিয়ে আমরা যেগুলো বাকি ছিল করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন প্রথম ক্ষমতায় আসি তখনই বর্গা চাষিদের বিনা জামানতে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। মাত্র ১০ টাকায় কৃষক যাতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কৃষকদের উপকরণ সার ও বীজসহ সব উপকরণ কিনতে যাতে অতিরিক্ত খরচ না হয় সেজন্য ভর্তুকি দিয়েছি। এখন বাংলাদেশের কৃষক লাঙ্গল নয়, কলের লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করে মেশিনের মাধ্যমে জমি চাষ, রোপণ, মাড়াই সবকিছু হবে মেশিনে, তার জন্য আমরা ৫০-৬০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন সহজ করে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমরা আজকের আমাদের ছেলে-মেয়েদের বিনা পয়সায় বই দিয়েছি, প্রাইমারি থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত উপবৃত্তি দিয়ে থাকি। আমরা গবেষণামূলক টাকা দেই যাতে আমাদের প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারে। স্কুলে আগে কোনো ওয়াশ ব্লক ছিল না, মেয়েরা যেতে পারত না। আমরা সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বিনা পয়সায় বই দেওয়া, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করা সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। মা-বাবাকে আর কষ্ট করে বই কিনে দিতে হয় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘরের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিক দিয়েছি, যেখানে বিশেষ করে আমাদের মা বোনেরা হেঁটে গিয়ে যেন চিকিৎসা সেবা পায় সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মোট কথা, মানুষের যে মৌলিক চাহিদাগুলো রয়েছে সেগুলো যেন সব শ্রেণি-পেশার সবস্তরের মানুষ সমানভাবে পায় তা নিশ্চিত করে দিয়েছি। এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯-এর সরকার গঠন করে এ পর্যন্ত সরকারে আছি বলেই আজকে আমরা কাজগুলো করতে পেরেছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও আপনাদের কাছে এসেছিলাম। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আজ আবারও এসেছি। উত্তরবঙ্গ বিশেষ করে রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট প্রত্যেকটা এলাকাই ছিল দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকা, মঙ্গা লেগেই থাকত। আজকে সেই মঙ্গা আর নেই, আজকে দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকা আর নেই। এই এলাকাগুলোর সাধারণ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করত। আমাদের লক্ষ্য ছিল নৌকা মার্কা যখন জয়ী হবে, ক্ষমতায় আসবে, আমরা এই উত্তর বঙ্গের মানুষের মঙ্গা দূর করব। প্রত্যেকটা উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রামের উন্নয়ন করব, ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে জেলা পর্যন্ত রাস্তা-ঘাটের উন্নতি হবে। আমরা উন্নয়ন করেছি। এখনো অনেক কাজ চলমান রয়েছে। এসব উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আপনাদের কাছে আবারও এসেছি। আমি আপনাদের উপর বিশ্বাস রাখি, আপনারা আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে টানা চতুর্থবারের জন্য সরকার গঠনের সুযোগ দিয়ে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো অব্যাহত রাখবেন। বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন। প্রধানমন্ত্রী সকাল ১১টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে সড়ক পথে শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জ যাওয়ার পথে রংপুর-২ আসনের তারাগঞ্জ উপজেলায় নেমে তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি মহাবিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের যৌথ আয়োজনে এতে সভাপতিত্ব করেন তারাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আতিয়ার রহমান। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেন তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আনিছুর রহমান লিটন। দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী তারাগঞ্জের নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো তারাগঞ্জে নির্বাচনি পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রেখেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত