দিন দিন উন্নয়নের সোপানে প্রবেশ করছে পাহাড়ের কৃষি। এক সময় যেখানে জুমই ছিল প্রধান কৃষি ব্যবস্থা, সেখানে এখন নানা আধুনিক চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। সমৃদ্ধ হচ্ছে পাহাড়ের কৃষি। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নে অবস্থিত ‘পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র’ পাহাড়ে ‘টিসা’ বা ‘ডিম ফল’ চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ডিম ফল পাহাড়ের কৃষির অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই আশা করছে গবেষণা কেন্দ্রটি। ‘টিসা ফল’ বা ‘ডিম ফল’ প্রথম দক্ষিণ মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকায় উৎপত্তি হয়। যার বৈজ্ঞানিক নাম Pouteria campechiana. উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন এ ফলটির ভেতরের অংশ দেখতে অনেকটা সিদ্ধ ডিমের কুসুমের মতো হওয়ায় ফলটিকে ডিম ফল বলা হয়। চার থেকে পাঁচ বছর বয়সি একটি গাছে গড়ে ৪৫০-৫০০টি ফল ধরে। ফলের ওজন গড়ে ১৭০-১৯৫ গ্রাম হয়ে থাকে। পরিপক্ব প্রতিটি গাছ থেকে ৬৫ থেকে ৭০ কেজি ফলন পাওয়া যায়। এ ফলের ভক্ষণযোগ্য অংশ প্রায় ৮০ থেকে ৮২ ভাগ। প্রতিটি পরিপক্ব ফলের রং হলদে রঙের হয়ে থাকে। কৃষির বাতিঘর খ্যাত পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের নিজেদের জমিতে ২০১৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সর্বপ্রথম বিদেশি জাতের এ ফলের ২০টি চারা রোপণ করা হয়। ২০২১ সালের শেষের দিকে গাছগুলোতে ফুল এবং ফল আসতে শুরু করে। বর্তমানে গাছগুলোতে ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা গত ছয় বছর ধরে ফলটি নিয়ে গবেষণা করে সফলতা অর্জন করেছেন। পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে থেকে বলা হচ্ছে, পাহাড়ি অঞ্চলের আবহাওয়া, মাটি ও তাপমাত্রা এ ফল উৎপাদনের উপযোগী। পাহাড়ের কোনো রকম ক্ষতি না করে পতিত (অব্যবহৃত) জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এ ফল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন। সেই সঙ্গে কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে ডিম ফল। পাকা ডিম ফল সরাসরি খাওয়া যায়। অনেকটা সফেদার মতো ফলটির স্বাদ মিষ্টি। এছাড়া এ ফল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন কেক, চকলেট, জুস এবং আইসক্রিম তৈরি করা হয়। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নে অবস্থিত পাহাড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী গবেষণা কর্মকর্তা মো. সামছুদ্দোহা বলেন, টিসা ফলের ওপর ২০২২-২৩ সালে একটি পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় চারটি জার্মপ্লাজম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল এবং এ চারটি জার্মপ্লাজম এ গবেষণা কেন্দ্রে রোপণ করা হয়। বংশবিস্তারের জন্য বীজ থেকে টিসা ফলের চারা উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রাফটিং বা কলম পদ্ধতির মাধ্যমে চারা উৎপাদনে সফলতা এসেছে। পাহাড়ি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, গাছটির উল্লেখযোগ্য দারুণ বৈশিষ্ট্য হলো- সারা বছর গাছটি থেকে ফলন পাওয়া যাবে। বছরে অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমের আগে একবার এবং বর্ষা শেষ হলে সার দিলে চলে। গাছটিতে কোনো রোগবালাই নেই বললেই চলে। ভিটামিন, মিনারেল এবং ঔষধি গুণসমৃদ্ধ এ ফলের জাত বাংলাদেশের জন্য একটি মাইনর ফ্রুট বা অপ্রচলিত জাত। ফলটি নিয়ে কৃষকদের যেমন আগ্রহ বেড়েছে, তেমনি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রটিও কৃষকদের মধ্যে ফলটির পরিচিতি এবং চাষাবাদ বাড়াতে কাজ করছে।