জাতীয় সংসদ নির্বাচন

চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে বাড়ছে উত্তাপ-উত্তেজনা

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চট্টগ্রাম ব্যুরো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে বাড়ছে উত্তাপ-উত্তেজনা। কিছু কিছু আসনে অস্থিরতা এখনই শুরু হলেও আবার কিছু কিছু আসনে বিরাজ করছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। এসব আসনে এখন ভিন্ন পরিস্থিতি। সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আছে বলে জানান ভোটাররা। এটাকে অনেকে ইতিবাচক পরিস্থিতি পরিবেশ বলেও অবহিত করেছেন। চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, আনোয়ারা এবং কোতোয়ালি ছাড়া অন্যান্য আসনগুলোতে শুরু থেকেই ছিল নির্বাচনি উত্তাপ। তবে চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম-৬ রাউজান, চট্টগ্রাম-১৩ আনোয়ারা এবং চট্টগ্রাম-৯ কোতোয়ালি আসনের নির্বাচনি পরিবেশ একেবারে ভিন্নচিত্র। শুরু থেকেই এই চারটি আসনে প্রার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নেই। এখনো ইসি কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে নোটিশ দেয়নি। কেউ কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেননি। এই চার আসনে আওয়ামী লীগের চার হেভিওয়েট প্রার্থী যথাক্রমে রাঙ্গুনিয়ায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আনোয়ারায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, রাউজানে বর্তমান সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এবং বাকলিয়া-কোতোয়ালি আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তারা ছাড়াও এসব আসনে অন্য দলের মোট ২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনি প্রচার প্রচারণা শুরুর পর থেকে কোনো দলের প্রার্থীর প্রতি কারো কোন অভিযোগ নেই।

চার আসনের প্রার্থী-ভোটারদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পোস্টার ব্যানারের পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, সুপ্রিম পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট, ইসলামী ফ্রন্ট, ন্যাপ, কল্যাণ পার্টির প্রার্থীদের পোস্টার ব্যানার। সমানতালে চলছে প্রচার প্রচারণাও। বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা বলেন, চট্টগ্রামের অন্যান্য আসনগুলোর তুলনায় এই চার আসনে নির্বাচনি পরিবেশ একেবারেই ভিন্ন। চট্টগ্রামের অন্যান্য আসনগুলোর মতো এই ৪টি সংসদীয় এলাকায়ও নির্বাচনি উৎসব বেশ জমে উঠেছে। প্রার্থীদের পাশাপাশি তাদের কর্মী-সমর্থকরাও নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে কিছু কিছু আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসও মিলছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে লড়ছেন নৌকা প্রতীকে। তার বিপরীতে রয়েছেন ৯ জন প্রার্থী, তার মধ্যে দুজন স্বতন্ত্র। পর্যালোচনায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম-১০ আসনের নির্বাচনি এলাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের শুলকবহর-৮, দক্ষিণ কাট্টলী-১১, সরাইপাড়া-১২, পাহাড়তলী-১৩, লালখান বাজার-১৪, উত্তর আগ্রাবাদ-২৪, রামপুর-২৫ ও উত্তর হালিশহর-২৬ নম্বর ওয়ার্ড। এই আটটি ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪৭৮ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭৬ জন পুরুষ, ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৯ জন নারী ও ২৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে ২০ হাজার ২৩২ জন ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে এখানে এবং প্রথমবারের মতো ২৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

আসনটিতে লড়ছেন সোনালি আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির ফেরদাউস বশির, চেয়ার প্রতীকের ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আবুল বাশার মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন বাচ্চু, ফুলকপি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম, লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির জহরুল ইসলাম রেজা, একতারা প্রতীকে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মিজানুর রহমান, কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদ, মশাল প্রতীকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) আনিছুর রহমান, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ আলমগীর ইসলাম বঈদী। এরই মধ্যে মহিউদ্দিন বাচ্চু সম্প্রতি হওয়া উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিয়ে জিতে বর্তমানে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে ৯ জন প্রার্থী থাকলেও ভোটের মাঠে সরব দেখা যাচ্ছে মহিউদ্দিন বাচ্চু, মোহাম্মদ মনজুর আলম ও ফরিদ মাহমুদকে। এর মধ্যে মহিউদ্দিন বাচ্চু বর্তমান সংসদ সদস্য এবং মোহম্মদ মনজুর আলম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র থাকায় দুইজনের জনপ্রিয়তা শীর্ষে। তবে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবনে জনসম্পৃক্ততা কম নয় আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ মাহমুদের। ভোটার এ তিন প্রার্থীকে মূল্যায়ন করলে দুই আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিযোগিতায় মনজুর এগিয়ে যেতে পারেন- এমন মন্তব্য করছেন ভোটাররা।

নির্বাচনি এলাকার বাসিন্দা মো. জসিম বলেন, ভোটাররা বিভিন্ন কারণে একেকজন প্রার্থীর পক্ষে থাকেন। এখানে সবাই মনজুর সাহেবকেই বেশি চেনে। উনি আগে মেয়র ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় দান-খয়রাত করেন। মানুষ তার কাছে গিয়ে খালি হাতে ফেরে না। অনেকে ব্যবসা করে শুধু নিজেরা টাকা উপার্জন করে। কিন্তু মোস্তাফা-হাকিম পরিবারকে সবাই চেনে। তারা যেমন ধনী, তেমন অনেক সেবামূলক কাজও করেন। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। ওনার সঙ্গে আমাদের এলাকার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।