অন্যরকম

হঠাৎ এখানে ওখানে জ্বলে উঠছে আগুন

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

হঠাৎ করেই বাড়ির এখানে-সেখানে জ্বলে উঠছে আগুন। কেউ জানে না কীভাবে এসব আগুন লাগছে। কখনো আগুন ধরছে আসবাবপত্রে, কখনো বা পরিধানের জামা-কাপড়ে আবার কখনো ঘরের চালে। কখনো সকালে, আবার কখনো বিকালে। প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস ধরে এভাবেই পার হচ্ছে। এসব ঘটনায় এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পূর্ব দায়চারা গ্রামের শাহাদাত পাটওয়ারীর বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটছে। শাহাদাত পাটওয়ারী পেশায় একজন কৃষক। তার একটি দালান ঘর এবং দুটি টিনের ঘরের বিভিন্ন জিনিসে আগুন লেগে কিছু সময় পরে নিভে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, আগুন থেকে রক্ষা পেতে চলছে কবিরাজের ঝাড়ফুঁক, তাবিজ কবচ। এমনকি মিলাদ ও দোয়া পড়িয়ে গরু জবাই দিয়ে খাওয়ানো হয় গ্রামবাসীকে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। তাই আগুন আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার এখন বাড়িছাড়া। প্রথম দিনের আগুনের সূত্রপাতের সঠিক তথ্যও এখনো মেলেনি। স্থানীয়দের দাবি এটি একটি অলৌকিক ঘটনা। সংশ্লিষ্টদের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তার কোনো ব্যাখ্যাও মেলেনি। সরেজমিন ওই বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে শাহাদাত পাটওয়ারীর পরিবার। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। বাড়িতে তার স্ত্রী, এক ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতি থাকেন। তারা দিনের বেলায় বাড়িতে থাকলেও রাতে অন্য স্থানে ঘুমান। তাদের বসতঘরের আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, লেপ-তোশক বিভিন্ন জিনিসে আগুনের পোড়া দাগ এবং এমনকি পারিবারিক মসজিদ প্রাঙ্গণের বিভিন্নস্থানে আগুনের পোড়া দাগ দেখা গেছে। শাহাদাত পাটওয়ারীর ভাতিজা সাইফুল ইসলাম বলেন, এটি সত্য ঘটনা। গত ৭ থেকে ৮ মাস ধরে আমি নিজেও দেখেছি। আমার জেঠার ঘরে আগুন ধরেছে। বাড়ির মুরব্বির গায়ে অনেকবার আগুন ধরেছে। আমি কয়েকবার আগুন নেভাই। আমাদের বাড়ির মানুষ অনেক আতংকে আছেন। আমাদের বাড়ির মধ্যে জেঠার ঘরেই প্রথমে আগুন ধরে। প্রতিবেশী রহমত উল্লাহ বলেন, ঘরের মধ্যে কিছুক্ষণ পর পর আগুন ধরে যায়। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত তা জানি না। লেপ-তোশক, স্টিলের আলমারিতে আগুন লাগে। দীর্ঘ ৬-৭ মাস ধরে এ ঘটনা ঘটতেছে। পাশের বাড়ির কামরুল পাটওয়ারী বলেন, আজকে ৮ মাস ধরে আমাদের পাশের বাড়িতে অলৌকিকভাবে আগুন লাগছে। প্রথমে আমরা ভেবে নিয়েছিলাম কেউ হয়তো শত্রুতা বসত বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে যায়। পরে দেখলাম আমাদের চোখের সামনেই আগুন ধরে যাচ্ছে। এই নিয়ে তারা অনেক আতঙ্কে আছে। আল্লাহ পাক যেন তাদের মাফ করে দেন। জাকির হোসেন পাটোয়ারী নামে ওই এলাকার আরেকজন বলেন, কারেন্টের প্লাগের মধ্যে প্রথম আগুনের সূত্রপাত হয়। তারপর ঘরের প্রতিটি রুম, সোফা, খাটে অলৌকিকভাবে আগুন জ্বলে ওঠে। বিল্ডিং ও চৌচালা ঘর কিছুই বাদ পড়েনি। ওই ঘরের এক নারী নামাজ পড়তে গিয়েছিল। তার পেছন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এক বাচ্চা ছেলের মাথায় আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের ঘরের মালামাল বাড়ির পাশে মসজিদে রাখা হয়। সেখানেও আগুন লেগে যায়। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা ফজলুল করিম বলেন, তারা এ আগুন থেকে রেহাই পেতে মিলাদ ও দোয়া পড়িয়ে গরু জবাই দিয়ে সবাইকে খাইয়েছে। এক মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হামিদ বলেন, আগুন থেকে রেহাই পেতে আমরা কয়েকজন হুজুরের সঙ্গে এসেছি দোয়া-দরুদ পাড়ানো জন্য। এখানে এসে দেখি অটোমেটিক আগুন লেগে যাচ্ছে। কে বা কারা আগুন লাগিয়েছে আমরা দেখি না। কি জন্য কি কারণে এখানে আগুন ধরছে তাও আমাদের জানা নেই। অনেক কবিরাজ এসেছে তারাও কিছু করতে পারছে না। ওই বাড়ির মসজিদের ইমাম হাফেজ লেয়াকত আলী বলেন, আজ থেকে ৭ মাস আগে এক মুসল্লি বলল ওই বাড়িতে আগুন ধরেছে। তারপর আমি সেখানে যাই। গিয়ে দেখি খাট, লেপ, তোশক ও একটা ছেলের গায়ে আগুন লেগেছিল। এ ঘটনায় আমাদের দিয়ে কোরআন শরীফ খতম করান। কিছুদিন অন্য হুজুর দিয়ে কোরআন খতম করান। এতে কোনো লাভ হয়নি। এরপর কবিরাজ এনেছে। তাদের ১৮-২০ হাজার টাকা হাদিয়া দিয়েছে। এতে কিছুদিন ভালো থাকতো। আবার শুরু হতো। বেশকিছু দিন আগে আমি আবারও ওই ঘরে কোরআন তেলওয়াত করতে যাই। এ সময় দেখি একজন মহিলার গায়ে আগুন ধরে যায়। তাড়াতাড়ি আগুন নিভিয়ে ফেলি। তিনি আরও বলেন, এটি একটি অলৌকিক ঘটনা। এটি কোনো মানুষের কাজ নয়। জ্বিন বা অন্য কোনো কিছু এ কাজ করতে পারে। ভুক্তভোগী শাহাদাত বলেন, আমি গত ৭-৮ মাসে আগুনের ঘটনায় খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। আমার বয়স ৭০ বছরের বেশি। আগুনের ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে খুব চেষ্টা করেছি। কিন্তু রেহাই মিলছে না। বেশি কথা বলতে পারি না। আমি সবার দোয়া চাই। চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর গ্রাহক প্রতিনিধি (পরিচালক) আলী আজম রেজা বলেন, ঘটনাটি পূর্বে থেকে শুনে আসছি। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু আমি নিজে যখন গিয়ে দেখলাম এবং আমাদের সামনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটল। তখন থেকেই বিশ্বাস করেছি। বৈদ্যুতিক কোনো সমস্যা আছে কি না সেটিও আমি পরীক্ষা করিয়েছি। বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা নেই। তিনি আরও বলেন, বৈদুতিক লাইনে কোনো আগুন ধরেনি। কখনো বাড়ির উঠানে রাখা কোনো জিনিসে, খাট, লেপ, তোশক, ঘরের ভেতরসহ বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরে যাচ্ছে। তবে আগুন জোরালো ভাবে ধরছে না। দিনের বেলায় এ ঘটনাগুলো ঘটছে। এটি একটি আজব ঘটনা। যার কোনো ব্যাখ্যা আপাতদৃষ্টিতে মিলছে না। প্রায় ছয়মাস ধরে এমন হচ্ছে শুনেছি। গত বৃহস্পতিবারের আগে ঘন ঘন এ ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ঘরের বাসিন্দারা অগ্নিকাণ্ড নিয়ে অতিষ্ঠ। আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড় ও লেপ, তোশকে আগুনের পোড়া দাগ। এই ধারা চলমান আছে। দেখে আমি নিজেও হতবম্ভ। চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. রাশেদুজ্জামান জানান, আমার বিষয়টি জানা নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে। ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ওই বাড়িতে আগুন লাগলে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে যাওয়ার পূর্বেই স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আমি ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডের কোনো সূত্রপাত পাইনি। পরে এলাকাবাসী জানায় তাদের বাড়ির পাশে মসজিদের ভেতর ও বাইরে তাদের জামা-কাপড় রেখেছিল। সেই খানেও আগুন ধরে যায় এবং নামাজ পড়তে গেলে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। বিষয়টি আমি কর্তৃপক্ষকে অবগত করি। ওই এলাকাবাসীকে জানাই তারা অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি জানতে আমাদের কাছে আবেদন করতে হবে। আমরা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয় নিয়ে তদন্ত করব।