প্রবাসীদের রেমিট্যান্স কম আসার পেছনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায় দেখছেন না মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি বলেন, আমাদের কাজ লোক পাঠানো। আর রেমিট্যান্স আনার দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ ব্যাংকের।
গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় প্রবাসী দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। ইমরান আহমদ বলেন, রেমিট্যান্স না বাড়ার কারণে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওপর অভিযোগ করা যাবে না। আমাদের কাজ লোক পাঠানো। আর রেমিট্যান্স আনার দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ ব্যাংকের। আমরা আমাদের কাজ করছি। তারা তাদের কাজ করলে আশা করি রেমিট্যান্স বেড়ে যাবে।
চলতি বছর যে পরিমাণ কর্মী বিদেশে গেছে আগামী বছর এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত বছর ১১ লাখ মানুষ গেছে। এ বছর এখন পর্যন্ত যে অবস্থা আছে আমরা ধারণা করছি, ১২ লাখের ওপরে চলে যাবে। আমার বিশ্বাস, আগামী বছরও রেকর্ড হবে।
ইমরান আহমদ বলেন, আমাদের দক্ষতার ওপর জোর দিতে হবে। আমরা দক্ষতার জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। দক্ষ লোকই পাঠাতে হবে। সেটি কিছুটা হয়েছে, কিছুটা হয়নি। ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে বাড়তি নজর দিতে হবে। রিক্রুটিং এজেন্সির ট্রেনিংয়ের সঙ্গে সরকারি ট্রেনিংয়ের মধ্যে সমন্বয় না হলে সমস্যা তৈরি হবে। আমাদের দক্ষ জনবল থাকলে সবাই আসবে জনবলের জন্য।
নতুন শ্রমবাজারের অভাব নেই এবং বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা আছে বলেও জানান মন্ত্রী ইমরান। প্রবাসী দিবস পালন নিয়ে মন্ত্রী জানান, প্রবাসী দিবসের আইডিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। বাস্তবায়ন করেছে, আমাদের মন্ত্রণালয়। এভাবেই কিন্তু আমরা আমাদের কাজগুলো বাস্তবায়ন করছি। প্রবাসে যারা আছেন তাদের কিন্তু দূতাবাসেই যেতে হয়। দূতাবাস ছাড়া ওদের আর কোনো জায়গা নাই। দূতাবাসে যেসব লোকজন আছে তাদের সহযোগিতার জন্যই আমরা বিদেশে কাজ করতে পারছি এবং তারাও যে সেবা পাওয়ার কথা সেটি পাচ্ছেন। কিছু কিছু অভিযোগ মাঝেমধ্যে আসে কিন্তু সেটি তো থাকবেই। অভিযোগ থাকলেও তার সমাধানও হয়ে যাবে। প্রবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করেন ইমরান আহমদ।
তিনি বলেন, প্রবাসে অভিবাসী যে শ্রমিক রয়েছে তাদের অবদানের কারণে দেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে সচল আছে। এ কথাটা আমাদের বার বার মনে করতে হয়।
অনুষ্ঠানে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফর বলেন, আমাদের প্রবাসী কর্মীরা হোস্ট দেশে কেন মর্যাদা পায় না? কারণ, তাদের আমরা দক্ষ করে পাঠাই না। তারা অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে বিদেশ যায়। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও প্রবাসী কল্যাণ সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বক্তব্য দেন।
সর্বাধিক রেমিট্যান্স পাঠানো ৫৯ প্রবাসী পেলেন সিআইপি মর্যাদা : বৈধ পথে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠানো ৫৯ প্রবাসীকে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) হিসেবে সম্মাননা দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এছাড়া আরো দুটি ক্যাটাগরিতে ১১ প্রবাসীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। গতকাল বিশ্ব প্রবাসী দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেওয়া হয় এ সম্মাননা।
তারা হলেন- যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ড. এব্রাহাম মোহাম্মদ সরকার, দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ আরিফ উদ্দিন, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী মোহাম্মদ ইমরান, যুক্তরাজ্য প্রবাসী তাহসিন উদ্দিন খান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সুবর্ণ সিমন্তনী, দুবাইপ্রবাসী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, সৌদিপ্রবাসী শাহজাহান আইজ উদ্দিন, ওমান প্রবাসী আফতাব উদ্দিন জনি, সিরাজুল হক, আশ্রাফ উদ্দিন (রনি), দুবাইপ্রবাসী আবু বক্কর, আলতাফ হোসেন, ওমান প্রবাসী রফিকুল আলম, দক্ষিণ সুদানপ্রবাসী কামরুল হাসান সাগর, পোল্যান্ডপ্রবাসী মো. ইমরান হোসেন, আরব আমিরাতপ্রবাসী মো. আল রুমান খান, মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, এইচ এম কামরুজ্জামান, সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ শওকত কামাল, সুইজারল্যান্ডপ্রবাসী ড. আমিন আহম্মেদ খোন্দকার।
এছাড়া আরো হলেন দুবাইপ্রবাসী মোহাম্মদ জবরুত খান, কাতারপ্রবাসী মোহাম্মদ এমরান হোসেন, আরব আমিরাত প্রবাসী সৈয়দ মামুনুর রশিদ, মো. কাশেম মিয়া, মোহাম্মদ এহসানুর রহমান, মাওলানা জয়নাল আবেদীন, সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইউসুফ শরিফ, মুহাম্মদ জিয়া উদ্দিন, মোহাম্মদ ওসমান খান, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সৈয়দুর রহমান, ওমানপ্রবাসী তাসলিমা করিম মিলি, পোল্যান্ডপ্রবাসী মো. নান্নু শেখ, সিঙ্গাপুর প্রবাসী মো. শরীফ উদ্দিন মাহমুদ, বাহারাইনপ্রবাসী মহি উদ্দীন, আরব আমিরাত প্রবাসী আনিস উদ্দিন, সুইডেনপ্রবাসী কাজী শাহ আলম, আমিরাতপ্রবাসী মোহাম্মদ সানাউল্লাহ চৌধুরী, সৌদিপ্রবাসী ওসমান মৃধা, আরব আমিরাতপ্রবাসী আব্দুল হালিম, গোলাম মোহাম্মদ, জাপানপ্রবাসী সজল ডি ক্রুজ, মালদ্বীপপ্রবাসী মাসুদ রানা, গ্রিসপ্রবাসী মো. সাইদুর রহমান, দুবাইপ্রবাসী নুরজাহান আক্তার, মোসাম্মৎ জেসমিন আক্তার, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সুশান্ত দাশ গুপ্ত, দুবাই প্রবাসী শাহজাহান বাবলু, জার্মানপ্রবাসী প্রকৌশলী মো. ফেরদৌস আলম, মালয়েশিয়া প্রবাসী মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন, আমিরাতপ্রবাসী মো. জাকির হোসেন, জাপানপ্রবাসী সাইফুল হক, ওমান প্রবাসী মোসলেহ উদ্দিন, কাতারপ্রবাসী কাজী তানজুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আহাদুল ইমাম, আমজাদ হোসেন চৌধুরী, ওমান প্রবাসী মোহাম্মদ বাদশা মিয়া ও কবির আহমেদ। বাংলাদেশে শিল্পক্ষেত্রে সরাসরি বিনিয়োগকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী কল্লোল আহমদ এবং বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক অনিবাসী ১০ জনকে সিআইপির মর্যাদা দেওয়া হয়।