কঠোর অবস্থানে পুলিশ প্রশাসন
থার্টি ফার্স্ট নাইটে নিয়মের বাইরে গেলেই ব্যবস্থা
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের প্রাক্কাল্লে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত দেশবাসী। তবে জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবেশ ঘিরে এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। গত ২৮ অক্টোবর থেকেই রাজনীতির মাঠে অস্থিরতা। অবরোধ-হরতাল, নাশকতা-সহিংসতা যেমন চলছে, তেমনি আটক-গ্রেপ্তারসহ কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখন আবার ভোটকে ঘিরে প্রচারণা-জনসংযোগসহ নানা তৎপরতা চলছে সারা দেশে। এসবের মধ্যেই দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপিত হবে আজ মধ্য রাতে। সার্বিক দিকবিবেচনায় থার্টি ফার্স্ট নাইটকে ঘিরে এবারও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে পুলিশ প্রশাসন। এসব বিধিনিষেধ মেনে না চললে বা নিয়মের বাইরে গেলেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে পুলিশ। গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে ঘটেছে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা। মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে অনেকটা সময় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকে। এছাড়া রাজধানীর কয়েকটি স্থানে ঘটে অগ্নিকাণ্ড। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে ফানুস ওড়াতে গিয়ে রাজধানীর অন্তত ১০টি স্থানে আগুন লাগে। এর মধ্যে মাতুয়াইল স্কুল রোডের একটি বাড়িতে ফানুস থেকে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। একই রাতে ঢাকার বাইরে এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১৯০টি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, সব ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা ফানুস ওড়ানো বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে সংস্থাটি। এসব বিধিনিষেধ না মেনে যদি কেউ নিয়মের বাইরে গিয়ে ফানুস ওড়ায় বা আতশবাজি ফোটানো অবস্থায় হাতেনাতে ধরা পড়ে তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবারও থার্টি ফার্স্ট নাইটে মাঠে থাকবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সংস্থাটির একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউনিফর্ম পরা র্যাব সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা নজরদারি করবেন। প্রস্তুত থাকবে র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে নজরদারি করবে। সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহন ও পথযাত্রীদের তল্লাশি করা হবে।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, ভিআইপি, কূটনৈতিক মিশন এলাকায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছিল মানুষের বাসাবাড়ির ছাদও। কিন্তু তাতেও থামিয়ে রাখা যায়নি উদযাপন। আতশবাজি আর ফানুসে ভরপুর ছিল ঢাকার আকাশ। একযোগে পটকা বা আতশবাজি ফোটানোও থেমে ছিল না। বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছিল গোটা মহানগরী। অনেক শিশু ও বয়স্করা সে শব্দে অসুস্থ পর্যন্ত হওয়ার খবর মেলে। ফানুসের আগুন ছিটকে পড়ে বিভিন্ন এলাকায় আগুন লেগে ক্ষয়ক্ষতি হয়।
সন্ধ্যার পর হাতিরঝিলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ইংরেজি নববর্ষের অনুষ্ঠান প্রকাশ্য স্থানে কোনো ধরনের সভা-জমায়েত বা উৎসব করা যাবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
গতকাল ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ইংরেজি নববর্ষের প্রাক্কালে ৩১ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় নগরবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন আনন্দ উৎসবে অংশগ্রহণ করবে। এ আনন্দ উৎসব উদযাপনের নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি নিজস্ব সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ঐতিহ্যবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে থাকে। কতিপয় ব্যক্তি আনন্দের আতিশয্যে পটকাবাজি, আতশবাজি, ফানুস ওড়ানো, অশোভন আচরণ, বেপরোয়া গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালানোর মাধ্যমে রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়।
ক্ষেত্র বিশেষে প্রকাশ্যে অভদ্রজনোচিত আপত্তিকর আচরণ করে থাকে। এসব নৈতিক মূল্যবোধ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা সৃষ্টি করে। ঢাকা মহানগরীতে নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিম্নোক্ত নির্দেশনাসমূহ মেনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।
নির্দেশনাসমূহ নিম্নরূপ : ১. ঢাকা মহানগরের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায় এবং প্রকাশ্যে স্থানে কোনো ধরনের সভা-জমায়েত বা উৎসব করা যাবে না।
২. উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান, সমাবেশ, নাচ, গান ও কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না।
৩. কোথাও কোনো ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো বা ক্রয় বিক্রয় করা যাবে না।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার পর বহিরাগত কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত যানবাহন পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে প্রবেশ করতে পারবে।
৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টার মধ্যে স্ব-স্ব এলাকায় প্রত্যাবর্তন করবেন এবং রাত ৮টার পর প্রবেশের ক্ষেত্রে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে।
৬. গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় রাত ৮টার পর বহিরাগতরা প্রবেশ করতে পারবে না। তবে ওই এলাকায় বসবাসরত সম্মানিত নাগরিকরা নির্ধারিত সময়ের পর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) এবং মহাখালী আমতলী ক্রসিং দিয়ে পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে প্রবেশ করতে পারবে।
৭. একইভাবে উপর্যুক্ত সময়ে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় যেসব নাগরিক বসবাস করেন না, তাদের বর্ণিত এলাকায় গমনের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হলো।
৮. হাতিরঝিল এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে কোনো সমাবেশ বা অনুষ্ঠান করা যাবে না এবং কোনো যানবাহন থামিয়ে অথবা পার্কিং করে কেউ অবস্থান করতে পারবে না। ৯. গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় বসবাসরত সম্মানিত নাগরিকদের ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টার মধ্যে স্ব-স্ব এলাকায় প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুরোধ করা হলো।
১০. ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার পর ঢাকা মহানগরীর কোনো বার খোলা রাখা যাবে না। ১১. আবাসিক হোটেলগুলো সীমিত আকারে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান করতে পারবে।
১২. ইংরেজি নববর্ষের প্রাক্কালে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা হতে ১ জানুয়ারি ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, জনসমাবেশ ও উৎসবস্থলে সব প্রকার লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা যাবে না।