সাত দফা নিয়ে জাসদের ইশতেহার ঘোষণা
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাষ্ট্র-রাজনীতি-অর্থনীতি-বাজার নিয়ন্ত্রণকারী লুটেরা-দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট দমন, সুশাসন ও আইনের শাসন নিশ্চিত, বৈষম্য-বঞ্চনার অবসান ও বাংলাদেশের জন্ম শত্রুদের মূলোৎপাটন করে জাতীয় বিকাশ অব্যাহত রাখতে চায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতীয় পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে সংসদে-রাজপথে সংগ্রামের অঙ্গীকার ঘোষণা করে সাত দফার নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছে দলটি। গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জাসদ কার্যালয়ে কর্নেল তাহের মিলনায়তনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জাসদের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে ইশতেহার উপস্থাপন করেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি। এ সময় দলের সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান বাবুল, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান মুক্তাদির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন ও শ্রমিক নেতা সাইফুজ্জামান বাদশাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাসদের নির্বাচনি ইশতেহারে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট-সংকট-সম্ভাবনা ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপট-সংকট সম্ভাবনার যুগে আমাদের অত্যাবশ্যক জাতীয় পুনর্জাগরণকে কাঠামোবদ্ধ করার জন্য আমাদের বিদ্যমান সংবিধানের পর্যালোচনা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ বিদ্যমান সংবিধানের অসঙ্গতি ও গোজামিল দূর করতে উপরে বর্ণিত আদর্শিক বিষয়াবলী বিবেচনায় রেখে জরুরি ভিত্তিতে ‘সংবিধান পর্যালোচনা’র প্রস্তাব রাখছে।
এ পর্যালোচনায় জাসদ সর্বজনীন খাদ্য নিরাপত্তা, সর্বজনীন স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, সর্বজনীন শিক্ষা, সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা ও সর্বজনীন ইন্টারনেট অভিগম্যতাকে নাগরিকের অবশ্যিক মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্তরে স্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে জনগণের স্বশাসন কায়েম করা, শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী মেহনতি জনগণের অধিকার-মর্যাদা-কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ‘উচ্চকক্ষ’ গঠনসহ দ্বিকক্ষ-বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করা এবং প্রচলিত আসনভিত্তিক নির্বাচনের বদলে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিম্নকক্ষের পাশাপাশি উচ্চকক্ষের সকল শ্রম-কর্ম-পেশার জনগণের প্রতিনিধির সঙ্গে সঙ্গে স্বশাসিত স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের দেশ পরিচালনায় ভূমিকা রাখায় গুরুত্ব আরোপ করছে।’
জাসদের নির্বাচনি ইশতেহারে রাষ্ট্র পরিচালনার রাজনৈতিক নীতি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি, উন্নয়ন নীতি, খাতওয়ারি নীতি, বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য নীতি, জাতীয় নিরাপত্তা নীতি, পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে দলের বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরা হয়েছে।
জাসদের ইশতেহারে আরো বলা হয়, জাসদের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করলে দলের নির্বাচনি ইশতেহারের ভিত্তিতে সংসদীয় ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি সমানতালে রাজপথে রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করবে।
শিরীন আখতার আরো উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের জনগণ গত ৫২ বছরে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয়-রাজনৈতিক অব্যস্থাপনা প্রত্যক্ষ করেছেন, বেশ কয়েক ধরনের সামরিক-বেসামরিক শাসনের মুখোমুখি হয়েছেন এবং অনেক ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে তারপরও এদেশে এখনো পর্যন্ত কোনো স্থায়ী রাষ্ট্রীয়-রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। সামরিক শাসক, স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তি ও এই উভয় ধারার ধারাবাহিক আঁতাত বারবার বাংলাদেশের মীমাংসিত বিষয়গুলো অমীমাংসিত করার অপচেষ্টা করেছে। অতীতের ধারাবাহিকতায় এরা এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা করছে। রাজনৈতিক কৌশলের বিভ্রান্তি পরিহার করে বা ক্ষমতার জন্য আপস না করে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেরকে মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে।
এ সময় ইশতেহারে বলা হয়, গত দেড় দশকে অনেকগুলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হলেও সীমাহীন দলবাজি-দলীয়করণ-দুর্নীতি-লুটপাট-সিন্ডিকেটের মাফিয়াচক্র বাংলাদেশের এক ভয়াবহ ‘বিপদ’ হিসেবে সামনে এসেছে, উন্নয়ন-অগ্রগতিকে নস্যাৎ করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। সেজন্য জাসদ ২০০৯ সাল থেকে দলবাজি-দলীয়করণ-দুর্নীতি-লুটপাট-সিন্ডিকেটের মাফিয়াচক্র দমন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে জঙ্গিবাদ মোকাবিলার পরপরই দ্বিতীয় প্রধান রাজনৈতিক অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করে এবং সংসদে ও সংসদের বাইরে ধারাবাহিকভাবে দাবি উত্থাপন করতে থাকে। একই ধারাবাহিকতায় জাসদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলবাজি-দলীয়করণ-দুর্নীতি-লুটপাট-সিন্ডিকেটের মাফিয়াচক্র দমনের রাজনৈতিক এজেন্ডা উপস্থাপন করছে।
বলা হয়, গত দেড় দশকে অনেকগুলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হলেও, সরকারি হিসেবেই এখন বিরাজ করছে বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম আয় বৈষম্য। দশক দশক ধরে বিকশিত সাম্প্রদায়িক রাজনীতি লালিত সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতার কারণে আয় বৈষম্যের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈষম্যের সাংস্কৃতিক মাত্রাও। দ্বাদশ জাতীয় সংসদন নির্বাচনের প্রাক্কালে জাসদ দলের প্রতিষ্ঠাকালীন ঘোষণার আলোকে বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে সর্বাত্মক সংগ্রাম পরিচালনার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদ মনোনীত ৬৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে ৬৩ জন দলীয় প্রার্থী দলীয় প্রতীক মশাল এবং তিনজন প্রার্থী ১৪ দলীয় জোটের অভিন্ন প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ৬৬টি আসনের বাইরে বাকি ২৩৩টি আসনে জাসদ ১৪ দলের অভিন্ন প্রার্থীদের সমর্থন করেন।