অন্যরকম
এই মাছ খেলে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে মানুষ
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
সারপা সালপা অদ্ভুত এক গুণের জন্য এই মাছ খুবই বিখ্যাত। তবে তার রূপেরও কমতি নেই! রুপালি আঁশের ওপর সোনালি ডোরা। জলের মধ্যে যখন মাছটি সাঁতার কেটে বেড়ায়, তখন দেখে মনে হয় রুপার মুদ্রা ছড়িয়ে রয়েছে। সালেমা পর্জি নামেও পরিচিত এ মাছ খেলে মাদক সেবনের নেশা হয়। দেখে নিরীহ মনে হলেও সালেমা পর্জি কিন্তু ততটাও নিরীহ নয়। বলা হয়, এই মাছ খেলে নেশা থাকে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা। এলএসডি (লাইসারজিক অ্যাসিড ডিথাইলামাইড) খেলে যেমন নেশা হয়, এই মাছ খেয়েও নাকি তা-ই হয়। আফ্রিকা উপকূল-সংলগ্ন আটলান্টিক মহাসাগর এবং ভূমধ্যসাগর এই মাছের বাসস্থান। আরবিতে সালেমা পর্জিকে বলা হয়, ‘যে মাছ স্বপ্ন দেখায়’। মনে করা হয়, রোমান সম্রাটেরা এই মাছ খেয়ে নেশা, আমোদ করতেন। পলিনেশীয়রা উৎসব-অনুষ্ঠানে এই মাছ খেতেন। ২০০৬ সালে একটি প্রতিবেদনে প্রথম এই মাছ খেয়ে নেশার কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছিল। সেখানে ১৯৯৪ সালের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়। সেই বছর ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরায় বেড়াতে গিয়েছিলেন ৪০ বছরের এক ব্যক্তি। সেখানে এই মাছ সেঁকে খেয়েছিলেন তিনি। খাওয়ার পরের দিনই শুরু হয় বমি, মাথাঘোরা। চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন তিনি। পেশি দুর্বল হয়ে যায়। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বাড়ি ফিরে যাবেন। গাড়িতে চেপে বসেন। কিন্তু বুঝতে পারেন, গাড়ি চালাতে পারছেন না। চারদিক থেকে পশুর চিৎকার ভেসে আসতে থাকে তার কানে। ওই ব্যক্তি সোজা হাসপাতালে ছোটেন। সেখানে ভর্তি হয়ে যান। প্রায় দুই দিন চিকিৎসার পর সেরে ওঠেন। যদিও কী হয়েছিল তার, মনে করতে পারেননি। ২০০২ সালে ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরাতেই একই রকম ঘটনা হয়। সেন্ট ট্রোপেজে ওই মাছ কিনে গ্রিল করে খেয়েছিলেন ৯০ বছরের এক ব্যক্তি। মাছটি খাওয়ার পরই ওই প্রবীণ নানা রকম শব্দ শুনতে থাকেন। কানে আসতে থাকে মানুষের চিৎকার, পাখির কলরব। টানা দুই দিন নানা রকম স্বপ্ন দেখেন তিনি। ভেবেছিলেন, মানসিক সমস্যা হয়েছে তার। সামুদ্রিক প্রাণীবিদ ক্যাথরিন জাদো সমুদ্রের মাছ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সালেমা পর্জি খেলে মানুষের স্নায়ুতন্ত্র প্রভাবিত হতে পারে। এলএসডি খেলে যেমন নেশা হয়, এই মাছ খেলেও তেমন হতে পারে। অনেক বিজ্ঞানীই আবার মনে করেন, এই মাছ খেলে সবার যে নেশা হবে, তা নয়। অনেকেরই শরীরে এই মাছের কোনো প্রভাব পড়ে না। যদি সবারই নেশা হতো, তা হলে এই দিয়ে মাদক তৈরি হতো। কেন এই মাছ খেলে কারো কারো নেশা হয়? সেই নিয়ে ২০১২ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে এই মাছের খাদ্যাভ্যাসকে দায়ী করা হয়েছিল। এই মাছ ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন জাতীয় অ্যালগি খায়, যা থাকে পসিডোনিয়া ওশিয়ানিয়া নামে সামুদ্রিক ঘাসে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই অ্যালগির প্রভাবে সালেমা পর্জির শরীরে টক্সিন তৈরি হয়। তবে মাছটির শরীরে কী ধরনের টক্সিন তৈরি হয়, তা স্পষ্ট নয় বিজ্ঞানীর কাছে। কেউ মনে করেন সালেমা পর্জির শরীরে ইন্ডোল গোষ্ঠীর ক্ষার থাকে। এলএসডির গঠনও এ রকমই। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, সালেমা পর্জির শরীরে ডিমেথলাইট্রাইপথামিন (ডিএমটি) থাকে। ডিএমটি এক ধরনের মাদক জাতীয় পদার্থ যা অনেক জীবেই থাকে। গবেষকদের মতে, এই ডিএমটির কারণে এই মাছ খেলে নেশা হতে পারে। তবে কী থেকে আসলে নেশা হয়, তা নিয়ে বিশেষ গবেষণা হয়নি। কয়েকজন বিজ্ঞানীর দাবি, এই মাছের মাথা না খেলে নেশা হয় না। মাথা ছাড়া মাছ মরিচ আর লেবু দিয়ে সেঁকে অনেকেই খেয়ে থাকেন। তবে কার কখন নেশা হতে পারে, তার উত্তর নেই। তবে অনেকেই মনে করেন, কোনো সময় এই মাছ ধরা হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে তা খেলে কতটা নেশা হবে। একদল বিজ্ঞানী মনে করেন, শরৎকালে এই মাছে টক্সিসিটি সব থেকে বেশি থাকে। তখন এই মাছ খেলে নেশা হতে বাধ্য। যদিও এই মাছ খেয়ে নেশা হওয়ার যত ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, তা সবই বসন্তের শেষে এবং গ্রীষ্মে। যদিও সালেমা পর্জি নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্নের জবাব মেলেনি।