চট্টগ্রামে শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে নির্বাচনি প্রচারণা। লোকজনের উপস্থিতিও বাড়ছে আগের চেয়ে বেশি। প্রচারণা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রার্থীদের কর্মীদের মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষ বাড়লেও উৎসবের আমেজ বেশি স্বস্তি দিচ্ছে ভোটারদের। তারা বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করা এবং প্রচারণা চালানোর সুযোগ দেয়ায় ভোটের পরিবেশও আগের চেহারায় ফিরে আসছে। এতে দেশের গণতন্ত্র হবে সমৃদ্ধ। এদিকে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণও চলছে জোরেশোরে।
বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কর্মী-সমর্থকরা শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত। চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনে এখন ১২৬ প্রার্থী নির্বাচনি মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তবে উত্তাপ-উত্তেজনা ঘুরে ফিরে সেই ১২টি সংসদীয় আসনেই। আর উত্তেজনা ১২ আসনের নৌকা, স্বতন্ত্র এবং জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থীসহ ২৬ হেভিওয়েটকে ঘিরেই। চট্টগ্রামের এই ১২টি আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, সুপ্রিম পার্টি এবং স্বতন্ত্র মিলে শতাধিক প্রার্থী নির্বাচনি লড়ছেন। এর মধ্যে ১০ আসনে নৌকার ১০ প্রার্থী, ২ আসনে জাতীয় পাটির দুই প্রার্থীসহ এসব আসনে ১৪ জন হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনি মাঠ সরগরম করে রেখেছেন শুরু থেকেই। মূলত এই ১২ আসনে ২৬ হেভিওয়েট প্রার্থীর সরব প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি সংঘাত সংঘর্ষ, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগেই চট্টগ্রামের নির্বাচনি মাঠে উত্তাপ বাড়ছে।
এদিকে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রার্থী মাঠে নেই। চট্টগ্রাম-৬ রাউজান, চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম-৯ কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম-১৩ আনোয়ারা এই চার আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা একেবারেই নির্ভার। তারপরও এই আসনে প্রচার-প্রচারণা এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই নৌকার প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের মাঝে।
চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে চট্টগ্রাম-১ মীরসরাই, চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম-৩ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী, চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-খুলশী), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা), চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া, চট্টগ্রাম-১৪ চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) এবং চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনে।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাইয়ে) নৌকার প্রার্থী মাহবুব রহমান রুহেল এবং এ আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম-২ (সন্দ্বীপ) আসনে নৌকার প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা এবং ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এবং তরমুজ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে নৌকার প্রার্থী এমএম আল মামুন এবং ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী লায়ন মোহাম্মদ ইমরান, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে লাঙ্গল প্রতীকের জাতীয় পার্টি প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৮ লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির সোলাইমান আলম শেঠ এবং কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম এবং ফুলকপি প্রতীকের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কিষাণ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনে নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু এবং ফুলকপি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনজুর আলম এবং কেটলি প্রতীকের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদ, চট্টগ্রম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফ এবং কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এবং ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল জব্বার চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী এবং ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেব, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান এবং ট্রাক প্রতীকের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ কবির লিটন সমানতালে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রামের এই ১২ আসনের বেশ কয়েকটি আসন ঘুরে দেখা গেছে, দিন দিন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে এসব নির্বাচনি এলাকায়। শুরু থেকেই নৌকা প্রার্থীর সঙ্গে যেসব আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে সেখানে সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামে ১০টি আসনে নৌকার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সমানে সমানে লড়ছেন ঈগল, ফুলকপি, কেটলি, তরমুজ এবং ট্রাক। আর ২টি আসনে লড়ছেন জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী। সেখানেও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট কেটলি, ঈগল এবং ফুলকপির স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে।