সুসংবাদ প্রতিদিন

শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সবুজ সবজির সমারোহ। সবজির ভালো ফলনে চাষিদের মুখে যেন হাসির ঝলক। শীতকালীন আগাম সবজি বাজারে তুলতে শুরু করেছেন তারা। মাঠে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে চাষিদের। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা লাভবান হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে ৩৪ রকমের শাকসবজি। গত ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩০ রকমের শাকসবজি চাষ হয় ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ, গতবারের তুলনায় এবার ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ করেছেন কৃষকরা। শীতের আগাম এসব সবজির মধ্যে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, টমেটো, মূলা, পটল, করলা, ঝিঙ্গা ও বরবটি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পালংশাক, পুঁইশাক, লালশাক এবং ধনিয়াপাতাও রয়েছে এ তালিকায়। কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শীতের আগাম সবজি চাষে গতবারের মতো এবারও শীর্ষে রয়েছে পবা উপজেলা। এ বছর উপজেলাটিতে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে চাষ হয় ১ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে। গোদাগাড়ী উপজেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে শাকসবজি। শহরের মূল প্রাণকেন্দ্র বোয়ালিয়া থানা এরিয়াতেও ১৭০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। তথ্য মতে, পবার নওহাটা ও খড়খড়ি, মোহনপুরের কেশরহাট ও বিদিরপুর, পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে সবচেয়ে বেশি শাকসবজি পাইকারি ক্রয়বিক্রয় হয়। এসব হাটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। এছাড়া এখানকার আড়তদাররা ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাকযোগে সবজি পাঠিয়ে দেন। শীত মৌসুমের সবজি উঠতে শুরু হওয়ায় এসব বাজারও জমতে শুরু করেছে। ব্যস্ত সময় কাটছে চাষিদের। অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে পরিচর্যায় মনোযোগ তাদের। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতের সময় অনেক বেশি সবজি বাজারে ওঠে। ফলে তুলনামূলক চড়া দাম পাওয়া যায়। যে কারণে আগাম সবজিতে বিশেষ নজর থাকে তাদের। আগাম সবজি বাজারে তুলতে পেরে দামও বেশি পাচ্ছেন চাষিরা। শিম, টমেটো ও বেগুনের দাম তুলনামূলক বেশি। আর দুই সপ্তাহ পর থেকে পুরোদমে সবজি উঠতে শুরু করবে। যদিও এরই মধ্যে কমতে শুরু করেছে লাউ ও শশার দাম। তবে এবার বেশ লাভবান হওয়ার আশাবাদ চাষিদের। জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল এলাকায় এ মৌসুমে ১০ প্রকার সবজি ও তিন রকম শাক চাষ করেছেন জেলা যুবলীগের সদ্য সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত সৈকত। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বাসায় খাওয়ার জন্য প্রতি বছরই সবজি চাষ করি। তবে এবার সবজির আইটেম বাড়িয়েছি। এবার আমার চাষ করা সবজির তালিকায় রয়েছে- শিম, করলা, লাউ, চালকুমড়া, বেগুন, টমেটো, কলা, পেপে, ডুমুর ও মাসকলাই। এছাড়া লালশাক, পুঁইশাক ও পালংশাক লাগিয়েছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক এ সদস্য বলেন, সবজি চাষের মতোই আবহাওয়া রয়েছে। যে কারণে সবজির ফলন ভালো হয়েছে। ঠিকভাবে পরিচর্যা করার কারণে আমার জমিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি। এগুলো উত্তোলনের পর পেঁয়াজ, রসুন ও দেশি আলু চাষ করব। জমি প্রস্তুত রেখেছি। শ্রমিক পেলে এ সপ্তাহেই এসব লাগানো শুরু করব। যদিও অভিযোগ রয়েছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে গভীর নলকূপ থেকে জমিতে পানি নিতে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় চাষিদের। সময়মতো পানি দিতে না পেরে ফসলের ক্ষতির ঘটনাও নতুন নয়। তবে ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জুয়েল রানা বলেন, ফলন যাতে ভালো হয়, সে লক্ষ্যে ইঁদুর নিধন মাসিক প্রোগ্রাম চলছে। পতিত বা অব্যবহৃত জায়গায় আমরা পুষ্টি বাগান করে দিচ্ছি। এটা খুব সাড়া ফেলছে। এ প্রকল্পে বিষমুক্ত পিওর সবজি পাওয়া যাচ্ছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, এবারের আবহাওয়াটা চমৎকার। আমরাও মাঠে গিয়ে চাষিদের পরামর্শ দিয়েছি। ফলে আশা করছি, উৎপাদন ভালো হবে। লাভবান হবেন চাষিরা।