পঞ্চগড়ে আবারো সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
দুর্ভোগে নিম্ন আয়ের মানুষ
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। গতকাল সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর তিন ঘণ্টা আগে ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশা কেটে ভোরেই পুবালি আকাশে জেগে উঠেছে সূর্য। তবে সূর্য উঠলেও কনকনে শীতের তাণ্ডবে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। শীতের কারণে বিপাকে পড়েছেন পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে রিকশা-ভ্যানচালকসহ শ্রমজীবী মানুষ। এতে করে কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন রোজগার। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন। বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীতার্তদের শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাজে বের হতে দেখা দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, এ অঞ্চলে দিনের চেয়ে সন্ধ্যার পর শীতের তাণ্ডব বেশি। রাত বাড়তে থাকলে বরফ হয়ে উঠে রাত। সারা রাত কুয়াশার সঙ্গে শিশির বৃষ্টি ঝরে। সে শিশিরও বরফের মতো ঠান্ডা। ভোরে সূর্য উঠে রোদ ছড়ালেও কনকনে শীত। হাত-পা অবশ হয়ে আসে।
গ্রামীণ নারীরা জানান, রাতে ও সকালে খুব ঠান্ডা। ঠান্ডার কারণে ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করতে পারছে না। সকাল ১০টা পর্যন্ত শীতের কারণে কাজ করতে গিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। ঘরের আসবাবপত্র, বিছানাপত্র, ঘরের মেঝে পর্যন্ত স্পর্শ করলে বরফের মতো ঠান্ডা মনে হয়।
তানিয়া আক্তার বৃষ্টি, সামিনা আক্তার ও মার্জিয়াসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীরা বলে, আমরা সকালে প্রাইভেট পড়তে যাই। ওই সময় প্রচণ্ড ঠান্ডা। পরে রোদ উঠলেও ঠান্ডা থাকে। রাতে ও ভোরে উঠে ঠান্ডার কারণে পড়ালেখা করা যায় না।
ভ্যানচালক দেলোয়ার, কালাম ও নাসির বলেন, ভোরে সূর্য উঠায় স্বস্তি মিললেও ঠান্ডার কারণে বের হতে ইচ্ছে করে না। তারপরও জীবিকার তাগিদে ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। তবে ইনকাম কম। লোকজন শীতের কারণে ভ্যানে উঠতে চায় না।
পাথর ও চা শ্রমিক এরশাদুল, কালাম ও জুয়েলসহ কয়েকজন জানান, দুই দিন ধরে সকালে রোদ উঠছে। কিন্তু প্রচণ্ড শীত। এ শীতে হাড় কাঁপছে। কিন্তু কী করার, জীবিকার তাগিদে কাজে বের হতেই হয়।
এদিকে শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা।
জেলার প্রথমশ্রেণির আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, গত তিন দিন ধরে এ জেলায় ৭ থেকে ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা রেকর্ড অনুসারে এ অঞ্চলে এখন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ভোরেই সূর্যের মুখ দেখা গেছে। দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকছে। কিন্তু এলাকাটি হিমালয় বিধৌত হওয়ায় এখানে অন্যান্য এলাকা থেকে শীত আগে নামে। এ সময়টাতে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। তাপমাত্রা আরো কমতে পারে।