উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট

নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গতকাল অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এই নির্বাচনে ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৪ জন ভোটার। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ১৯৭ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৩৯ হাজার ৮৮৯ জন রয়েছে।

ভোটকেন্দ্রে নারী ভোটারদের অধিকাংশই এসেছে পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজনের সঙ্গে দল বেঁধে। দুপুরে নারীদের অনেককে ভোটকেন্দ্রে প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে ভোট দিতে দেখা যায়। সকাল ৮টা থেকে ভোট প্রদানের সুযোগ থাকলেও কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা বাড়তে থাকে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার দিকে। দুপুরের দিকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।

বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যদিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ভোটাররা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বিকাল সাড়ে ৫টায় সাংবাদিকদের বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এটি বাড়তে বা কমতে পারে।

এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে ১ হাজার ৯৬৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। বেশি প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। তবে বিএনপিসহ কিছু দল নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভোট প্রতিহতের কর্মসূচি পালন করেছে। এবার ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নওগাঁ-২ সংসদীয় আসনের একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় এই আসনটিতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ভোটকেন্দ্র ছিল ৪২ হাজার আর ভোট কক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার।

২৯৯ আসনে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ১ হাজার ৯৬৭ জন ছিল। এরমধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ১ হাজার ৫৩২ জন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৩৫ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী ৯৭ জন এবং সনাতন ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রার্থী ৭৯ জন। তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী ছিল দুইজন। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে পালন করেছেন ৯ লাখের বেশি কর্মকর্তা। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ৮ লাখ বাহিনীর সদস্য মাঠে ছিলেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বরাবরের মতো এবারের নির্বাচনেও তীব্র শীতের মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজধানীর ভোট কেন্দ্রগুলোর মধ্যে গেন্ডারিয়া ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব, সিটি কলেজ, নাজিরাবাজার ইসলামী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শান্তিনগর আবুজর গিফারী কলেজ, ধানমণ্ডি মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে সরেজিমন ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র শীতের মধ্যেও বেশিরভাগ কেন্দ্রে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। গরম কাপড় ও চাদর গায়ে দিয়ে ভোটকেন্দ্রে হাজির হন তরুণী ও প্রবীণ নারী ভোটাররা। বুথের সামনে সুশৃঙ্খলভাবে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে খুশি তারা।

নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের উপস্থিতিও ছিল অনেক। ভোটকেন্দ্রে এসে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পেরে সবাই খুশি। নাজিরাবাজার ইসলামী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন পঞ্চার্ধ্ব কাজল সরকার। তিনি বলেন, বেশ ভালোভাবেই ভোট দিতে পেরেছি। ভোট দিয়ে ভালো লাগছে। গেন্ডারিয়া ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব কেন্দ্রে লাঠিতে ভর দিয়ে ভোট দিতে এসেছিলেন ৭০ বছরের মনিরা বেগম। কথা হলে তিনি বলেন, অনেক বয়স হয়ে গেছে, তারপরও ভোট দিতে এসেছি প্রার্থীদের অনুরোধে। আর ভোট দিতে পেরে ভালো লেগেছে।

সকাল ৮টায় ভোট শুরু হলেও শীতের সকালে ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বেড়েছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত সিটি কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নারী ভোটারের দীর্ঘ লাইন। প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছেন মাসুমা বেগম। তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, শীতের কারণে দেরিতে ভোট দিতে এসেছি। কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে পরে ভোট দিয়েছি। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পেরে ভালো লাগছে।

এছাড়া পুরুষদের জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতেও দীর্ঘ লাইন ছিল। দুপুরের পর ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি বাড়ে। ভোটাররা এসেই সরাসরি ভোট দিচ্ছেন। সেখানে মুসলেম উদ্দিন নামের তরুণ ভোটার বলেন, সকালে কোনো লাইন ছিল না, সরাসরি ভোট দিয়েছি। এদিকে নারী ও পুরুষ মিলে অন্তত ২৫টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেন্দ্রের বাইরে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোস্টার দিয়ে ছেয়ে ফেলা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোর সামনে দলীয় নেতাকর্মীদের ছিল ব্যাপক উপস্থিতি।

নির্বাচনে ভোটের শুরুতে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে জনসমাগম। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে কেন্দ্রে হাজির হন ভোটাররা। ধানমণ্ডি মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ভোটকেন্দ্রে দুপুর দেড়টায় শত শত ভোটার সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো। ধানমণ্ডি-২৭সহ আশপাশের এলাকাগুলো থেকে ভোটাররা ভোট দিতে আসেন। হঠাৎ ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ে। ভোটদানে যাতে বিলম্ব না হয় সেই বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসাররা সতর্ক ছিলেন। কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে না হয়, সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিপ্লব চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ভোটের আগে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম, ভোট দিতে পারব কি না। কিন্তু আজকে ভোট দিতে এসে দেখলামণ্ড এত সুন্দর ভোট আর কখনো দেখিনি। এই সিটি নির্বাচন অনেক সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়েছি।

দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণ তাদের ভোটের অধিকার পূর্ণভাবে চর্চা করেছে।

আগারগাঁও তালতলা বঙ্গবন্ধু একাডেমি কেন্দ্রে ভোটদান শেষে শফিকুল ইসলাম বলেন, সকালে বাসার কাজ শেষ করে দুপুরে ভোট দিতে এসেছি। প্রায় এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিতে বেশ কষ্ট হয়েছে। তরুণ-তরুণীদের অনেকে নতুন ভোটার হয়ে গতকালের নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দিয়েছে। ফলে ভোট নিয়ে তাদের উচ্ছ্বাস-উৎসাহটাও ছিল বেশি। শীত উপেক্ষা করে সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হলে ভোটকেন্দ্রে এসে বিপুল আগ্রহ নিয়ে তারা ভোট দেন।

মিরপুরের বাসিন্দা সরকারি তিতুমীর কলেজের মাস্টার্স শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার বলেন, গত বছর চার বান্ধবী ভোটার হয়েছি। আমাদের বাসা একই এলাকায়। এবারে জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দিয়েছি। খুব ভালো লাগছে। ভিড় হতে পারে ভেবে সকাল ৮টায় কেন্দ্রে চলে এসেছি। ভিড় ছিল না। তাই লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয়নি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট দিতে পেরেছি।