চট্টগ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনে বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ ছাড়া গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে লাইন ধরে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানাধীন মৌলভি পুকুর পাড় এলাকায় বিএনপির কর্মীরা ভোট দিতে বাধা দেন ভোটারদের। এরপর পুলিশ এসে কর্মীদের তাড়িয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুজন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম-১৬ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল ভোটগ্রহণের শেষ পর্যায়ে এসে এই সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন।

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে ইসি।

এদিকে চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া আসনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ওই আসনে ভোট প্রদান শেষে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত চেষ্টা করেছে ভোটকে ঘিরে মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উৎসাহ-উদ্দীপনাকে ম্লান করার জন্য, কিন্তু তাদের এই অপচেষ্টা ছাপিয়ে মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা উচ্ছ্বাসে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ভোটের সেই উৎসব আজ সারা বাংলাদেশে বয়ে বেড়াচ্ছে। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম-৭ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের সুখবিলাস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচন হচ্ছে আমাদের দেশে একটি উৎসব, সত্যিকার অর্থেই এই ভোট উৎসব বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটকে ঘিরে বিএনপির অপতৎপরতা ও অপচেষ্টা, মানুষের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার এই ভোট উৎসবের মধ্যে ঢাকা পড়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষ যেভাবে আজ ভোট উৎসবে শামিল হয়ে ভোট দিচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত ভোট উৎসবে জনগণের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, মানুষের প্রতিপক্ষ হলে কখনো তারা সফলকাম হয় না, হবেও না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং আশা করি আজকের নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজয় হবে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের ইতিহাসে পর পর চতুর্থবারের মতো এবং পঞ্চমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।

ড. হাছান মাহমুদ নিজের নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে জানিয়ে বলেন, অনেক জায়গায় সকাল ৮টার আগে থেকে মানুষ লাইন ধরেছিল। মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। এটি শুধু আমার নির্বাচনি এলাকায় নয়, সমগ্র দেশব্যাপী ব্যাপক উৎসাহে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এদিকে চট্টগ্রামে কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশি। আবার কিছু কিছু কেন্দ্রে ছিল কম। চট্টগ্রাম-৯ আসনের সব ক’টি কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২০ শতাংশেরও কম ভোট পড়েছে এসব কেন্দ্রের। কোতোয়ালি থানার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ ছিল না। জামালখান ওয়ার্ডের ডা. খাস্তগীর স্কুল, শাহ ওয়ালিউল্লাহ স্কুলে ৪ ঘণ্টায় ভোটগ্রহণের হার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছিল ২০ শতাংশের কম। খাস্তগীর স্কুলের প্রিজাইডিং অফিসার মো রাশেদ আল মামুন বলেন, সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের হার ছিল ৪ শতাংশ। সর্বশেষ দুপুর ১২টায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ।

এদিকে কদম মোবারক স্কুলে সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ১২০ জন। এখানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ভোটার আছে ৪৭৪৮ জন। নগরের চেরাগী মোড় এলাকায় ভোট দিতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, এই আসনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। খালি চোখে বোঝা যায় কে জিতবেন। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো নির্বাচনি উত্তেজনা নেই।

এদিকে চট্টগ্রাম-৯ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬জন। এর মধ্যে নারী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৩০ জন, ২ লাখ ১১ হাজার ৭৩৮ জন পুরুষ এবং হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৮ জন। এ আসনে ভোটকেন্দ্র ১৪২টি।

প্রসঙ্গত চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। প্রার্থী হিসেবে আরো ছিলেন ন্যাপের মিটুল দাশগুপ্ত, ইসলামী ফ্রন্টের আবু আজম, ইসলামিক ফ্রন্টের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, কল্যাণ পার্টির মোহাম্মদ নুরুল হোসাইন, জাতীয় পার্টির সানজিদ রশীদ চৌধুরী ও তৃণমূল বিএনপির সুজিত সরকার।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ নিজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। সকাল পৌনে ১০টায় আনোয়ারার হাইলধর বশিরুজ্জামান স্মৃতি শিক্ষাকেন্দ্রে তিনি ভোট দেন। পরে প্রতিক্রিয়ায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। টানা তিনবার জনগণের ভোটে এমপি ও মন্ত্রী হয়ে এলাকার জনগণের জন্য কাজ করেছি। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। জনগণ উন্নয়নের প্রতীক নৌকা ও আমার প্রতি আস্থা রেখে ভোট দেবেন।

চট্টগ্রাম-১৩ আসনে অন্যান্য প্রার্থীরা ছিলেন জাতীয পার্টির প্রার্থী আব্দুর রব চৌধুরী টিপু (লাঙ্গল), ইসলামিক ফ্রন্টের স ম হামেদ হোসাইন (চেয়ার), ইসলামী ফ্রন্টের মাস্টার আবুল হোসেন (মোমবাতি), তৃণমূল বিএনপির মকবুল আহমদ চৌধুরী সাদাদ (সোনালী আঁশ), সুপ্রিম পার্টির মো. আরিফ উদ্দিন (একতারা), খেলাফত আন্দোলনের মৌলভী রশিদুল হক (বটগাছ)।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ভোট দিয়েছেন নগরের আন্দরকিল্লা মুসলিম অ্যাডুকেশন সোসাইটি বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে। ভোট দেওয়ার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বিএনপি জনগণকে নির্বাচন বর্জনের ডাক দিলেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতিতে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া-চকবাজার থানাধীন ১৫ থেকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৩১ থেকে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৭ হাজার ৯৪৭ জন। এর মধ্যে ২ লাখেরও বেশি ভোটার বাকলিয়ার।

এই আসনে এবার মোট প্রার্থী ছিলেন সাতজন। নৌকার নওফেল ছাড়া অন্যরা হলেন- জাতীয় পার্টির সানজিদ রশিদ চৌধুরী, ন্যাপের মিটুল দাশগুপ্ত, ইসলামিক ফ্রন্টের মো. ওয়াহেদ মুরাদ, ইসলামী ফ্রন্টের আবু আজম, কল্যাণ পার্টির মুহাম্মদ নূরুল হোসাইন ও তৃণমূল বিএনপির সুজিত সাহা।