অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ হামলায় আহত হয়েছেন আরো ৯৯ জন। গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে গতকাল কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এই খবর জানিয়েছে।
এর মধ্যে মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহ’র কাছে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আটজন নিহত হয়েছেন। ৫১ বছর বয়সি নাবিল ফাথি নামে গাজার এক বাসিন্দা বলেছেন, ‘এটা একটা দুঃস্বপ্ন মনে করে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি, তবে এটি দুঃস্বপ্ন নয়, বাস্তব।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বাড়ি, আমার ছেলের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের পরিবারের ২০ জন শহীদ হয়েছেন। যদি বেঁচেও যাই তবে আমরা কোথায় যাব জানি না।’ গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা করার পর থেকেই গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ২২ হাজার ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, গাজার আল আকসা হাসপাতালের ৬০০ রোগী এবং স্বাস্থ্যকর্মীর কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তারা কোথায় আছে তা কেউ জানে না। মধ্যপ্রাচ্যে সফরের অংশ হিসেবে বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেনছেন, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়াতে যা কিছু দরবার সবকিছু করার বিষয়ে তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
এদিকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান সংঘাতের মধ্যেই নিজ দেশে জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলি পাবলিক ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের এক জরিপে জানানো হয়েছে, ৬৪ শতাংশ ইসরায়েলি বিশ্বাস করেন যে, গাজার সংঘাতে নেতানিয়াহু তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারেননি।
অপরদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার রাফাহ শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুই সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার হামজা ওয়ায়েল দাহদোহ ও অন্যজন বার্তা সংস্থা এএফপির মুস্তফা থুরায়া। গত রোববার গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, মুস্তফা এএফপির ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করতেন। আর হামজা আল জাজিরার নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন। গত রোববারও তারা ইসরায়েলের একটি হামলার খবর সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যেই হামলার শিকার হন তারা।
নিহত সাংবাদিক হামজার বাবা ওয়ায়েল আল-দাহদুর আল জাজিরার গাজা ব্যুরোর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত অক্টোবরে যুদ্ধের শুরুর দিকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামজার মাসহ পরিবারের চার সদস্য প্রাণ হারান। এর কয়েক দিন পর তার বাবাও ইসরায়েলি হামলায় আহত হন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাফাহতে এই দুই সাংবাদিককে বহনকারী গাড়িতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে যেখানে হামলা চালানো হয়েছে, সেটিকে নিরাপদ করিডোর হিসেবে ঘোষণা করেছিল ইসরায়েল। এই হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে যোগাযোগ করেছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। কিন্তু তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।