‘কারার ওই লৌহকপাট’

গানের এআর রহমান ভার্সন সরাতে নির্দেশ

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বলিউডের ‘পিপ্পা’ সিনেমায় এআর রহমানের রিমেক করা কবি নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গান সামাজিকমাধ্যম থেকে অপসারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। ৬ ডিসেম্বর সুপ্রিমকোর্টের ১০ আইনজীবী ও ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির এ রিট দায়ের করেন।

সুপ্রিমকোর্টের ১০ আইনজীবী হলেন, আইনজীবী বায়েজীদ হোসাইন, নাঈম সরদার, ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদী জামান, ব্যারিস্টার শেখ মঈনুল করিম, ব্যারিস্টার আহমেদ ফারজাদ, শহিদুল ইসলাম, মো. শাহেদ সিদ্দিকী, মো. আনাস মিয়া ও মো. বাহাউদ্দিন আল ইমরান। রিটে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে। এর আগে ১৯ নভেম্বর অবিলম্বে বাংলাদেশে ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানের এআর রহমান ভার্সন ফেসবুক, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সামাজিকমাধ্যম থেকে অপসারণ বা ব্লক করতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তাতে সাড়া না পেয়ে রিট করা হয়।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বলিউড সিনেমা ‘পিপ্পা’। এতে কবি নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানের রিমেক ব্যবহার হয়েছে।

রিমেকটি তৈরি করেছেন উপমহাদেশের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী এআর রহমান। এতে প্রশংসার বদলে বাংলা ভাষাভাষীদের সমালোচনার ঝড়ে পড়েছেন এ অস্কারজয়ী কম্পোজার। পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের নজরুল অনুরাগীরা নতুন সুরের গানটিকে মেনে নিতে পারছেন না। অনেকের ভাষ্য, গানটিকে বিকৃত করেছেন এআর রহমান।

গানটি নিয়ে মুখ খোলেন বিদ্রোহী কবির নাতি অনির্বাণ কাজী। এক রকম চটে গিয়ে তিনি বলেন, গানের ক্রেডিট থেকে তার পরিবারের নাম মুছে ফেলা হোক।

কলকাতার গণমাধ্যম অন্য সময়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনির্বাণ বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারিনি যে, রহমানের মতো একজন শিল্পী এতটা অসংবেদনশীল হতে পারেন এবং এভাবে গানটিকে হত্যা করতে পারেন। প্রতিবাদ হিসেবে, আমি চলচ্চিত্রের ক্রেডিট লাইনে বিশেষ ধন্যবাদে আমাদের পরিবারের নাম চাই না।’ কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার থেকে অনুমতি নিয়েই গানটি রিমেক করা হয়েছিল বলে তথ্য দেন অনির্বাণ।

তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে মা অনুমতি দিয়েছিলেন। সুর ও কথা না বদলে গানটা রিমেক করতে অনুমতি দিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় তাদের (নির্মাতা) পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গানটা তারা নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে চায়। তখন মা তাদের বলেছিলেন, গানটা তৈরি হয়ে গেলে একবার শোনাতে। কিন্তু ওরা কিছুই শোনায়নি। এরপর মাও মারা যান।’ গানটিকে বিকৃত করা হয়েছে অভিযোগ এনে অনির্বাণ বলেন, ‘রহমানকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়েই জানাতে চাই, তাকে কে অধিকার দিল গানটি বিকৃত করার? স্বত্ব দেওয়ার সময় তো সুর বদলের কথা বলা হয়নি। কী রকম একটা করে দিয়েছে গানটাকে! একটা গ্রামীণ সংগীতের মতো, ভাটিয়ালির মতো করে দিয়েছে। অনেক সস্তা করে দিয়েছে’। ১৯২২ সালের ২০ জুন ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি লিখেছিলেন কবি কাজী নজরুল। বীর মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন দাস কারারুদ্ধ হলে তার স্ত্রী বাসন্তী দেবী নজরুলকে বলেছিলেন, বাংলার মানুষকে নিয়ে কিছু লিখতে। সেই অনুরোধের প্রতি সম্মান রেখেই নজরুল রচনা করেছিলেন ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ কালজয়ী গান। ১৯৪৯ সালের জুন মাসে যা রেকর্ড করা হয়। গিরিন চক্রবর্তীর গলায় প্রথম ভেসে ওঠে বিদ্রোহের এই গান।