হিমেল বাতাস ও বরফ শিশিরে কাঁপছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়

শীতের কারণে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এসকে দোয়েল, পঞ্চগড়

খুব ঠান্ডা বাড়ে। হাত-পা অবশ হয়ে অসছে। কিন্তু কি করিম, পেটের ক্ষুধা তো ঠান্ডা বুঝে না। তাই ভোর-সকালত কাজত বের হইছু- এভাবেই বলছিলেন মোজাম্মেল হোসেন নামের চা চাষি। একই কথা বলেন ভ্যানচালক হাসমত আলীও। গতকাল সকালে ঘন কুয়াশার ঠান্ডার প্রকোপের কাহিল হয়ে এ কথা বলেন তারা। কয়েকদিনের শৈত্যপ্রবাহের পর আবহাওয়ার থার্মোমিটারের স্কেলে গতকাল আগের দিনের চেয়ে কমেছে তাপমাত্রা। ঘন কুয়াশার আবরণে বইছে শিশির বৃষ্টি, বাড়ছে বরফের শীত। হিমেল বাতাস ও বরফ শিশিরে কাঁপছে উত্তরের হিমাঞ্চল জেলা পঞ্চগড়। গতকাল সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ছিল আগের দিনের চেয়ে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কম। তাপমাত্রার রেকর্ডের তথ্যটি এই প্রতিবেদককে জানান জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ৮ জানুয়ারি ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি, ৭ জানুয়ারি ৮ দশমিক ১, ৬ জানুয়ারি ৯ দশমিক ৫, ৫ জানুয়ারি ৮ দশমিক ৪, ৪ জানুয়ারি ৮ দশমিক ৫, ৩ জানুয়ারি ৭ দশমিক ৪, ২ জানুয়ারি ১০ দশমিক ৭ ও ১ জানুয়ারি ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে জেলার পরিবেশ। কুয়াশার কারণে শহর ও গ্রামের সড়কগুলোতে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। ঘন কুয়াশার সাথে ঝরছে হিমশীতল শিশির। শীতের কারণে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা। ভ্যানচালক, পাথর ও চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে নানা শ্রমজীবী মানুষ। কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন রোজগার। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা। প্রয়োজন ছাড়াও অনেকে ঘর থেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেড়িয়েছেন নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত দেখা যায়নি সূর্যের মুখ।

স্থানীয়রা জানান, প্রচণ্ড ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশার মধ্যে দুই দিন ধরে ভোরে দেখা মিলছে না সূর্যের। গত সোমবার দিনভর কুয়াশায় ঢাকা ছিল জেলার পরিবেশ। গতকাল ঠান্ডা বাতাসের কারণে শীত লাগছে। তবে বেশি ঠান্ডা শুরু হয় সন্ধ্যার পর থেকে। রাত যত বাড়ে ততই রাত বরফ হয়ে ওঠে। সারা রাত কুয়াশার সঙ্গে শিশির বৃষ্টি ঝরে। শিশিরও বরফের মতো ঠান্ডা। ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে আসে।

গ্রামীণ নারীরা জানান, রোদ উঠলেও ভোর-সকালে কনকনে শীতের কারণে কাজ করতে গিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। ঘরের আসবাবপত্র, বিছানাপত্র, ঘরের মেঝে পর্যন্ত স্পর্শ করলে বরফের মতো ঠান্ডা মনে হয়। ফলে আমাদের মতো নারীদের সকালে কাজ করতে খুব কষ্ট হয়।

ফেরদৌসি আক্তার, মার্জিয়া ও সুমন রানাসহ শিক্ষার্থীরা জানান, সকালে খুব ঘন কুয়াশা পড়ে। তার সাথে শিশির। প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে। বিশেষ করে রাতে ও ভোরে উঠে পড়ালেখা করতে খুব কষ্ট হয় ঠান্ডার কারণে।

ভ্যানচালক হাসমত আলী জানায়, প্রচণ্ড কুয়াশার মধ্যেই জীবিকার কারণে ভ্যান নিয়ে বেড়িয়েছি। ঠান্ডা বাতাসের কারণে ভ্যান চালাতে গেলে হাতপা অবশ হয়ে আসে। আর কুয়াশার কারণে ভ্যানেও চড়তে চায় না কেউ। তাই কামাই কম, রোজগার তেমন ভালো হচ্ছে না। এদিকে শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা। জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, ভোর থেকে সূর্য ঢাকা রয়েছে। হিমেল বাতাস বইছে। বিশেষ করে শীত বেশি লাগার কারণ হচ্ছে বায়ুর গতি বেগ। উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, সেটি শীতকালের। বাতাসের গতি বেগ বেশি হলে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। সে অনুপাতে এ অঞ্চলে এখন শীতের তীব্রতা বেশি হচ্ছে।