ঝালকাঠি জেলায় এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল কাটা-মাড়াই করতে কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। সরেজমিন জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে সোনালি পাকা আমন ধান। সোনালি ফসলের মনোরম দৃশ্য এখন গোটা জেলাজুড়ে। ফলন ভালো হওয়ায় বেশি খুশি কৃষক। তাদের মুখে এখন হাসি। জেলার চারটি উপজেলাই কৃষকরা রোপা আমন ধান কাটা শুরু করেছেন।
শীতের সকাল থেকে পড়ন্ত বেলা পর্যন্ত মাঠে-মাঠে ফসল কাটার চিরাচারিত দৃশ্য দেখা যা”েছ গ্রামজুড়ে। চলছে গ্রামে গ্রামে ও মাঠের পর মাঠ সোনালি ফসল ঘরে তোলার মহোৎসব। কৃষক পাকা ধান কেটে আঁটি বেঁধে নিয়ে আসছেন। কেউ কেউ ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন। একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধান কেটে বাড়ির আঙিনায় আনার কাজ চলছে পুরোদমে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ধান মাড়াই শেষ হলে কৃষকদের ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসব শুরু হবে। এরপর রোদে শুকিয়ে ধান গোলায় তুলবেন কৃষক। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) ইসরাত জাহান মিলি জানান, এবছর জেলায় ৪৭ হাজার ২শত হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৪৭ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ায় কয়েক বছরের ব্যবধানে এবার রোপা আমন নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন কৃষক। তবে শেষের দিকে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত ও সবশেষে ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি মিলিয়ে আশা-নিরাশার দোলায় সব বৈরিতা কাটিয়ে আমনের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা কিছুটা ক্ষতির কথা জানালেও এমনটিই জানালেন কৃষি বিভাগ। কৃষিবিভাগ আরো জানায়, ঝালকাঠি জেলার চারটি উপজেলার মধ্যে নলছিটি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আমন ধানের ফলন হয়েছে। এ উপজেলায় ১২ হাজার ৯ শত ৮৭ হেক্টর জমিতে আমন ধানের ফলন হয়েছে। নলছিটি উপজেলার কয়েকজন কৃষক বলেন, ‘এবার আমাদের এলাকায় আমনের ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ মণ ধান হয়েছে। তবে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ট্রাক্টরে হাল দেওয়া, সেচ, মেশিনে ধানকাটা ও মাড়াইয়ে ডিজেল ব্যবহার করায় খরচ অনেক বেশি হয়েছে।’
প্রাকৃতিক বিপর্যয়মুক্ত বাম্পার আমন ফলন পেয়ে কৃষকরা অনেক খুশি হলেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সার, ডিজেল, কীটনাশকের দাম বাড়ার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। কাঁঠালিয়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বশির জানান, এবার উফশী জাতের ধান ১ হাজার ৯০২ হেক্টর জমিতে রোপণ করায় ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমে এসেছে। নিচু এলাকায় এই উফশী জাতের ধান চাষ উত্তম। তবে এখন কৃষকরা উদ্বিগ্ন ধানের মূল্য নিয়ে। শতাধিক মধ্যবিত্ত কৃষকরা জানায় রোপা আমন ধানের ওপর নির্ভর করে মৌসুমি সবজি রোপণসহ বিভিন্ন রবিশষ্য চাষাবাদ করার লক্ষ্য রয়েছে। ধানের বাজার মূল্য কমে গেলে মধ্যবিত্ত কৃষকদের এ লক্ষ্য পূরণ হবে না। কৃষকরা সরকারের কাছে ধানের নায্য মূল্য দাবি করেন।
কাঁঠালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান বিন ইসলাম জানান, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও রোপা আমন ধান চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ধানের ফলনও হয়েছে ভালো। তিনি আরো জানান, আমাদের দেশের স্বনির্ভরতার সবচেয়ে বড় অর্জন এই ধান। তাই ধান চাষাবাদে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। গত বছরের তুলনায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। তবে আশা করা হ”েছ, কৃষক আশানুরূপ ধান গোলায় তুলতে পারবে।