তিন দিন ধরে দেখা নেই সূর্যের

কুয়াশার হিমশীতলে বিপর্যস্ত পঞ্চগড়

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

তিন দিন ধরে দেখা মিলেনি সূর্যের। ঘন কুয়াশার চাদরে আবৃত উত্তরের হিমাঞ্চল জেলা পঞ্চগড়। কুয়াশার সাথে ঝরছে বরফের শিশির। আবহাওয়া মাপা থার্মোমিটারের স্কেলে তাপমাত্রা বাড়লেও বরফ ঝরা শিশির ও কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ সীমান্ত জেলা। এতে করে প্রচণ্ড শীত দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে নাজেহাল পরিস্থিতিতে দিনযাপন করছেন অনেকে। গতকাল সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত মঙ্গলবার রেকর্ড হয়েছিল ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোর ৬টায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি থেকে ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে রেকর্ড হচ্ছে তাপমাত্রা। সকালে তাপমাত্রার রেকর্ডের তথ্যটি এই প্রতিবেদককে জানান জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তৃতীয় দিনের মতো ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে জেলার পরিবেশ। কুয়াশার কারণে শহর ও গ্রামের সড়কগুলোতে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। শীতের কারণে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের পেশাজীবিরা। ভ্যান চালক, পাথর ও চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে নানান শ্রমজীবী মানুষ। কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন রোজগার। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা। প্রয়োজন ছাড়া অনেকে ঘর থেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেরিয়েছেন নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা।

এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত দেখা যায়নি সূর্যের মুখ। বিকালে তাপমাত্রা দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের তাপমাত্রা নিম্নমুখী হওয়া ও সন্ধ্যার পর আবার ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হওয়অয় কোলাহলহীন হয়ে পড়ে শহর ও গ্রামেরও হাটবাজারগুলো। বাজারগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় কাগজের কাটন, টায়ার ও কাগজে আগুন ধরিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যায়।

গত মঙ্গলবার রাতে কুয়াশাঝরা হাড়কাঁপানো শীতে জর্জরিত হয়ে শহরের বাজারে আগুন তাপাতে তাপাতে আল-আমিন ও সিদ্দীকসহ কয়েকজন বলেন, খুব ঠান্ডা ভাই খুবই ঠান্ডা। ঠান্ডায় কাহিল। ঠান্ডাসহ্য করতে না পেরে কাগজে আগুন লাগিয়ে তাপ নিচ্ছি। কিন্তু এতেও শরীর গরম হচ্ছে না। গ্রামীণ নারী ফিরোজা আক্তার, গুলজান ও মুক্তি জানায়, গত তিনদিন ধরে ঘন কুয়াশার কারণে ভোর-সকালে শীতে কাজ করতে গিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। ঘরের আসবাবপত্র, বিছানাপত্র, ঘরের মেঝে পর্যন্ত স্পর্শ করলে বরফের মতো ঠান্ডা মনে হয়। ফলে আমাদের মতো নারীদের সকালে কাজ করতে খুব কষ্ট হয়।

দিনমজুর হোসেন আলী ও আলাউদ্দিন বলেন, আজও খুব ঠান্ডা। হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। কিন্তু কিছু করার না। পরিবারের কথা চিন্তা করে কাজ করতে বের হয়েছি।

ফেরদৌসি আক্তার, মার্জিয়া ও সুমন রানাসহ শিক্ষার্থীরা জানান, আজ খুব ঘন কুয়াশা। তার সাথে শিশির পড়ছে। প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে। প্রাইভেটে যাচ্ছি। বিশেষ করে রাতে ও ভোরে উঠে পড়ালেখা করতে খুব কষ্ট হয় ঠান্ডার কারণে। ভ্যান চালক দেলোয়ার ও আরশেদ আলী জানায়, ক’দিন ধরেই প্রচণ্ড কুয়াশা। কুয়াশার কারণে কেউ ভ্যানে চরতে চান না। তারপরও ভ্যান নিয়ে বেরিয়েছি।

এদিকে শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেছেন চিকিৎসকরা।

জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, মঙ্গলবারের চেয়ে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। তবে ঘন কুয়াশার কারণে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গত মঙ্গলবার ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল। শীত বেশি লাগার কারণ হচ্ছে বায়ুর গতি বেগ। উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, সেটি শীতকালের। বাতাসের গতি বেগ বেশি হলে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। সে অনুপাতে এ অঞ্চলে এখন শীতের তীব্রতা বেশি হচ্ছে। গত মঙ্গলবার দিনের তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে।