ঢাকা ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গরম চা দিবস

তৃষ্ণা জুড়ায় তেঁতুলিয়ার গরম চা

তৃষ্ণা জুড়ায় তেঁতুলিয়ার গরম চা

চা পান করতে ভালোবাসেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। ক্লান্তি কাটাতে হোক, বন্ধুত্বের আড্ডায় হোক কিংবা আপ্যায়নে হোক চা পানে জুড়ি নেই। তাই গরম চা পানের তৃষ্ণা অনেকের। জীবনের শৈল্পিকতাও ফুটে উঠে এই চা পানের মধ্য দিয়ে। প্রতিদিনের পরিশ্রম ও মানসিক চাপ কমাতে চা পান করে থাকেন প্রায় সবাই। ভোর সকালে নাস্তার টেবিলে, ঘুম থেকেই উঠে এক কাপ চা, পত্রিকার পাতায় চোখ রাখতে চা, টেলিভিশনের টকশোতে চা, সকল আড্ডা, অতিথি আপ্যায়নে ও কর্মস্থলে মানসিক চাপ কমাতে এই চা পানের জুড়ি নেই। এই চা পান সংস্কৃতি চলছে উপ-মহাদেশের শত বছরেরও বেশি সময় ধরে। পানীয় হিসেবে চা খুব জনপ্রিয় হয়ে আসছে যুগযুগ ধরে। গতকাল ছিল গরম চা দিবস। দিনটি ‘হট টি ডে’ অর্থাৎ গরম চা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হয় চা কাউন্সিল। এরপর ২০১৬ সালে এই কাউন্সিল ‘হট টি ডে’ প্রচলন হচ্ছে। দিবসটি ঘিরে কোন আয়োজন না থাকলেও দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে চা পানের অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। জেলাটি স্বীকৃতি পেয়েছে চা উৎপাদনে দ্বিতীয় অঞ্চল হিসেবে। এ অঞ্চলের মানুষদের ঘরে ঘরে চলে আসছে চা পানের রসদ। নাস্তা থেকে অতিথি আপ্যায়ন, হাট-বাজার, কর্মস্থলেই রয়েছে চা পানের সংস্কৃতি। নাস্তার টেবিলে গরম চা না হলে তৃপ্ত হয় না ভোজনবিলাস। বাড়িতে কিংবা অফিসে অতিথি আসলে চা ছাড়া হয় না আপ্যায়ন। চা উৎপাদনের সঙ্গে চা পানেও দেশের অনন্য জেলা পঞ্চগড়। পঞ্চগড়ের এ সুস্বাদু চা পান করতে হলে পাওয়া যাবে, যেকোনো হোটেল কিংবা ছোট ছোট চায়ের দোকানগুলোতে। প্রতিদিন শতশত কেজি উৎপাদিত চা গরম পানীয় চা হিসেবে পান করছে এ জেলার মানুষ। এরকম সুস্বাদু চা বানানোর প্রশংসা রয়েছে তেঁতুলিয়া চৌরাস্তা বাজারের ওমর ফারুকের। এসএসসিতে লেটার মার্ক পাওয়ার পরও ভাগ্যের কারণে চায়ের হোটেলই হয়ে উঠেছে এ যুবকের রুজি-রোজগার। বাজারের মধ্যে ভালো চা বানায় বলে প্রশংসার শেষ নেই। এরপরে বলা হয়ে থাকে রফিকুলের নাম। অবশ্য এরও আগে হালিমের চা। স্থানীয়দের ছাড়াও পর্যটকদের কাছে ফারুকের চায়ের কদর অনেকের মুখে মুখে। এসব চায়ের হোটেলগুলোতে গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভোক্তারা জমিয়ে তুলেন নিত্য জীবনের নানা গল্পের রসদ। রাজনীতি, নির্বাচন, এলাকার প্রেক্ষাপট, কর্মপরিকল্পনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ের উপরও চলে সমালোচনাও। এদিকে হরেকম চা বানিয়ে পর্যটকদের মন কেড়েছেন হাফিজুল ইসলাম নামের তেঁতুলিয়ার আরেক যুবক। দীর্ঘদিন এলাকার বাইরে চাকরি শেষে সীমান্ত ঘেঁষা তেঁতুলিয়ার সদর এলাকার বড়বিল্লায় তিনি গড়ে তুলেছেন চায়ের দোকান। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তেঁতুলিয়ায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা সীমান্তের রূপসৌন্দর্য্য উপভোগ করতে গিয়ে কিছু সময় কাটিয়ে থাকেন বড়বিল্লায়। চায়ের চুমুক দিতে দিতে প্রকৃতির ছবিও তুলেন তারা। চা ভালো হওয়ায় কাপের কাপ চা খেতে দেখা গেছে এসব পর্যটকদের। দুধ চা ও রং চাসহ কাঁচা পাতার চা, কফি, মাল্টা, গ্রীন, মাসালা, পুদিনা, আমলকি, ত্রিফলা, তুলসি, জিরা, অর্জুন, তেতুল, মরিঙ্গা ও আদাসহ বেশ কয়েক প্রদের চা বানিয়ে পর্যটকদের মন তুষ্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন এ যুবক। তেঁতুলিয়ায় ঘুরতে আসা লুৎফর রহমান পাশা, জামান আরশাদসহ কয়েকজন পর্যটক জানান, সত্যিই অসাধারণ এ অঞ্চলের চা। সংস্কৃতি ও অতিথি আপ্যায়নে চায়ের কদর এখানে বেশি। খুব ভালো লেগেছে এখানকার চা। এছাড়াও এখানকার সমতলের সবুজ চা বাগান আমাদের মুগ্ধ করেছে। স্থানীয় আশরাফুল ইসলাম, আতিয়ার রহমান, আহসান হাবিব, আশরাফ বাবু ও তারেক হোসেনসহ স্থানীয়রা জানান, আমাদের অঞ্চলটি চা উৎপাদনে যেমন খ্যাতি অর্জন করেছে। তেমনি এখানকার চা পান সংস্কৃতিও বাইরের অতিথিদের মুগ্ধ করেছে। বাইরে থেকে কোনো অতিথি আসলে প্রথমত চা পানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আপ্যায়ন। এখানকার যে কয়েকজন ভালো চা বানান, তার মধ্যে ওমর ফারুক। তার বানানো চা সুস্বাদু ও তৃপ্তিকর। তার দোকানের মালাই চা’র তো সেরকম স্বাদের। তাই ফারুকের চায়ের তুলনা হয় না। আমরা অতিথি আপ্যায়নেও চা পান করিয়ে থাকি। একই কথা এ অঞ্চলের মানুষদের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত