ঢাকা ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিবিএস’র হালনাগাদ প্রতিবেদন

আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন মূল্যস্ফীতি ছিল ডিসেম্বরে

চলতি মাসে আরো কমবে
আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন মূল্যস্ফীতি ছিল ডিসেম্বরে

গত ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি আগের মাসের তুলনায় সামান্য কমেছে। এ মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা গত ৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তবে ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি কম দেখানো হলেও বাস্তবে বাজারের চিত্র ভিন্ন।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, একসঙ্গে ডিসেম্বরে গ্রাম-শহর নির্বিশেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে ১০ শতাংশের নিচে নেমেছে। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। নভেম্বরে এই মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত প্রায় ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বিবিএসের সচিব শাহনাজ আরেফিন বলেন, ক্রমান্বয়ে মূল্যস্ফীতি আরো কমে আসবে। জানুয়ারি মাসে আরো কমবে, কারণ এ মাসে আমন তোলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি হলো এক ধরনের করের মতো, যা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ বাড়ায়। খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে যাওয়ার অর্থ গরিব ও মধ্যবিত্তের সংসার চালাতে ভোগান্তি সামান্য কমেছে। তবে বাজারে শীতের শাক-সবজিসহ চাল, আটা, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, আলুসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম এখনো বাড়তি।

তিনি আরো বলেন, পুরো বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। যেমন আপনি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ১০০ টাকায় যত জিনিসপত্র কিনেছেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ওই টাকা দিয়ে সেই জিনিসপত্র পাবেন না। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আপনাকে ১০৯ টাকা ৪১ পয়সা খরচ করতে হবে। এই ৯ টাকা ৪১ পয়সা হলো মূল্যস্ফীতি। গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল এটাই।

বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, গত অক্টোবর ও নভেম্বরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৯৩ ও ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সে হিসেবে ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। তবে এখনো তা সাড়ে ৯ শতাংশের কাছাকাছিই রয়েছে। ডিসেম্বরে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ, আর শহরে এটি ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ হয়েছে।

বিবিএসের হিসাবে সর্বশেষ ডিসেম্বরে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নেমেছে। গত মাসে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। তার বিপরীতে শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ শহরের তুলনায় গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি। অন্যদিকে, গত মাসে দেশে সার্বিক খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। ডিসেম্বরে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা নভেম্বরে ছিল ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, ডিসেম্বরে শহর ও গ্রামে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি প্রায় সমান ছিল। গত মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি গ্রামে ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ ও শহরে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ হয়েছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি কমবে বলে আবারো পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে ৯ জানুয়ারি রাতে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ রিপোর্টে বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। গত অক্টোবরে প্রকাশিত বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ এ একই পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বহাল থাকতে পারে।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অনুমান সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অবশ্য সম্প্রতি সংশোধন করে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশিমক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাবে গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাবার পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতি বহাল থাকতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে আমদানিতে বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকতে পারে এবং তা বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের রপ্তানি আশানুরূপ বাড়ছে না। এ বিষয়টি অর্থনৈতকি প্রবৃদ্ধির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে কিছু সময় অনিশ্চয়তা ছিল, যা বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে প্রভাব ফেলতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত