কুড়িগ্রামের উলিপুরে রঙিন ফুলকপি চাষে সফলতা পেয়েছেন উপজেলার ধামশ্রেণি ইউনিয়নের ভদ্রপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমানের ছেলে কৃষিবিদ ফারুক আহমেদ। ব্যাপক সাড়া পড়েছে এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীদের মনে সুষম সার ব্যবস্থাপনার আওতায় আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত সম্প্রসারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্য থেকে তিনি এ সফলতা পান। নিজের ১০ শতক জমির অধিকাংশে এ রঙিন ফুলকপির চাষ করেন তিনি। এর আগে তিনি এ জমিতে প্রতি বছর নানা ধরনের সবজির চাষ করতেন। এবার প্রথমবারের মতো সেই জমিতে রঙিন ফুলকপির চাষ করে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তার উৎপাদিত রঙিন ফুলকপিগুলোর মধ্যে রয়েছে কমলা, বেগুনি, হলুদ, লাল ও সবুজ রঙের ফুলকপি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ফারুক আহমেদ প্রথম বাণিজ্যিকভাবে রঙিন ফুলকপির চাষ করেছেন। চীনে এ ফুলকপি সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। সাদা রঙের চেয়ে এ জাতের ফুলকপিতে পুষ্টিগুণও বেশি। দেখতে সুন্দর এ কপি অর্ধসিদ্ধ করেই খাওয়া যায়। অন্যান্য ফুলকপির মতোই কম খরচ ও স্বল্প পরিশ্রমে রঙিন কপি চাষ করা হয়। তবে শুধু জৈব সার ব্যবহার করেই এ কপির চাষাবাদ সম্ভব। দেশের হাট-বাজারেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চলতি মৌসুমে ফারুক আহমেদ তার জমিতে বিভিন্ন রঙের ফুলকপি চাষ করেন। রঙিন ফুলকপির সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন সকাল-বিকাল তার খেতে ভিড় জমান উৎসুক জনতা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ফুলকপি কিনছেন, কেউ বা পরামর্শ নিচ্ছেন। আবার অনেকেই রঙিন ফুলকপির সঙ্গে ছবি তুলছেন ও ভিডিও করছেন। এ বছর রঙিন ফুলকপি চাষ করে লাভবান হয়েছেন ফারুক আহমেদ। তার এমন সফলতা দেখে স্থানীয় তরুণসহ অনেকেই এ সবজি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তার এমন সাফল্যে খুশি স্থানীয় কৃষি অফিসও। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ফারুক আহমেদ নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইন অ্যাগ্রিকালচার পাস করে ব্যবসার পাশাপাশি কৃষিকাজে জড়িয়ে পড়েন। তিনি চিন্তা করেন, অল্প খরচে দ্বিগুণ লাভ করা সম্ভব কোন চাষে। পরে গবেষণা করে দেখেন রঙিন কপি চাষে অল্প খরচে দ্বিগুণ লাভ করা সম্ভব। রঙিন ফুল কপি ও বাঁধা কপির চারা সংগ্রহ করে নিজের ১০ শতক জমিতে প্রথমবার ৪০০ চারা চাষ করেন। এ বিষয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, নিজ উদ্যেগে নতুন জাতের রঙিন ফুলকপির ৪০০ চারা নেই। এরপর পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির পাশে মাত্র ১০ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপির চাষ করি। জমিতে চারা রোপণের ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে তা পরিপক্ব হয়। বাজারে নেওয়ার পর দামও প্রতি পিসে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি পাচ্ছি। অথচ সচরাচর যে ফুলকপি চাষ করতাম তা পরিপক্ব হতে আরো ২০ থেকে ৩০ দিন বেশি সময় লাগত। এখন সময় কম লাগাই কম খরচ ও শ্রমে বেশি লাভ পাচ্ছি। কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে সামনের বছর থেকে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে ফুলকপির চাষ করব। তিনি আরও বলেন, কপি ওঠানো পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ২০০ কপি বাজারে বিক্রি করেছি। তাতে আয় হয়েছে ৬ হাজার টাকা। এখনো জমিতে ২০০ কপি আছে। কয়েক দিনের মধ্যে বাজারজাত করা হবে। তাতে আরো আয় হবে ৬ হাজার টাকা। মোট আয়ের আশা করছেন ১২ হাজার টাকা, যা খরচেরও দ্বিগুণ। প্রতিদিন অনেক লোক দেখার জন্য আসছেন। আমার দেখাদেখি রঙিন কপি চাষাবাদ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরামর্শও নিচ্ছেন। এলাকাবাসী সিরাজুল, হারুন, জলিল মিয়া ও জাহিদুলসহ আরো অনেকে বলেন, আমাদের গ্রামে এই প্রথম রঙিন কপির চাষ দেখলাম। আমরা আগে কখনো শুনতেই পারিনি তা বিশ্বাসও করিনি। এখন আমাদের গ্রামের ফারুক এ কপি চাষ করেছেন তা নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস করেছি। দেখতে অনেক সুন্দর দামও অন্যান্য কপির চেয়ে বেশি। আমরাও আগামীতে এ কপির চাষ করব বলে জানান তারা। রঙিন কপি দেখতে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে জিমুল, ফয়ছাল ও উকিল বলেন, আমরা শুধু শুনেছি রঙিন কপি আছে। কিন্তু নিজের চোখে দেখিনি। আজ ফারুক আহমেদ ভাইয়ের রঙ্গিন কপি দেখে মুগ্ধ হলাম। তারাও এ কপির চাষ করার আগ্রহ দেখিয়ে ফারুকের নিকট থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ নিয়েছেন বলে জানান তারা।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, উপজেলায় এই প্রথম রঙিন কপির চাষ করেছেন ফারুক আহমেদ। কপির ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। তাকে সব ধরনের পরামর্শ দেয়া অব্যহত রেখেছি। আশা করি দ্বিগুণ লাভ করবেন বলে জানান তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, উপজেলায় এবারই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে রঙিন ফুলকপি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছেন ফারুক আহমেদ। কোনো কৃষক রঙিন কপির চাষ করতে আগ্রহ দেখালে তাকে ফুলকপির চারা ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া ফারুক আহমেদ রঙিন কপির চাষ করে লাভবান হয়েছেন। আমাদের অফিস থেকে কোনো সহযোগিতা চাইলে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব বলে জানান তিনি।