সুসংবাদ প্রতিদিন
নওগাঁয় সরিষা ফুল থেকে ৮ কোটি টাকার মধুর সম্ভাবনা
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আব্বাস আলী, নওগাঁ
নওগাঁয় বিভিন্ন উপজেলায় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ সরিষা ফুলের হলুদ হাসিতে রঙিন হয়েছে। সরিষার ফুলে সবুজের বুকে এ যেন কাঁচা হলুদের আলপনা। যত দুর চোখ যায় যেন সরিষা হলুদ ফুলের মাখামাখি। যেখানে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সৌন্দর্যের নান্দনিকতায়। আর সরিষা ফুল কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু আহরণ করছেন মৌয়ালরা। কৃষি বিভাগের কারিগরি সহায়তায় এসব মৌ বাক্স স্থাপন করে আহরণ করা মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। তবে সচেতনতা বৃদ্ধি, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং ঋণের সুবিধা দিলে আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে মধু সংগ্রহ সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ১০টি উপজেলায় সরিষা খেতের পাশে ৭ হাজার ৯৬৫টি মৌ বাক্স স্থাপন করেছেন মৌয়ালরা। এর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৬২০টি, রানীনগরে ১০০টি, আত্রাইয়ে ২৫৩টি, বদলগাছীতে পাঁচটি, মহাদেবপুরে ৯০টি, ধামইরহাটে ছয়টি, সাপাহারে ২ হাজার ২৫টি, পোরশায় ৩০০টি, মান্দায় ৪ হাজার এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় ৫৫৬টি। এছাড়া কৃষি বিভাগের ‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায়’ রানীনগর, আত্রাই, বদলগাছী ও মান্দা উপজেলায় প্রদর্শনীর প্রতিটিতে পাঁচটি করে মোট ২০টি বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসকড়ের পাশে ১৪০টি মৌ বক্স স্থাপন করা হয়েছে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট এলাকায়। এ পর্যন্ত তিনি ২৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করেছেন। মৌ চাষি জাহিদ হাসান বলেন, গত প্রায় ৯ বছর থেকে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছি। শুরুর দিকে চাষিরা বাধা দিতেন। তাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা ছিল ফুল নষ্ট হয়ে যাবে। ধিরে ধিরে তাদের ভুল ধারণা পরিবর্তন হয়েছে। মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুল পরাগায়ন হওয়ায় সরিষা বাড়ে। প্রতি বছর সরিষা ফুল থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ থাকে। মান্দা উপজেলার কালিগ্রাম গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফুল ভালো হয়েছে। আশপাশে কয়েকজন মৌয়াল এসে মধু সংগ্রহ করছেন। মৌমাছির কারণে আশা করছি ফলনও ভালো হবে। বিঘাপ্রতি ৬ মণ ফলনের আশা। নাটোর জেলা হতে আত্রাই উপজেলার এসেছেন মৌয়াল আব্দুল আলিম। তিনি বলেন, সরিষা খেতের পাশে ১০০টি মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছি। প্রতিটি বাক্সে আটটি করে ফ্রেম সাজানো আছে। সপ্তাহ পর পর ফ্রেম থেকে সংগ্রহ করা হয় মধু। ১০০টি মৌ বাক্স হতে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৭ থেকে ৮ মণ মধু সংগ্রহ হয়। প্রতি কেজি মধু ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৮০ কেজি মধু আহরণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান বাজার অনুসারে প্রতি কেজি ৩০০ টাকা হিসেবে আহরণকৃত মধুর মূল্য ৮ কোটি ৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা। চলতি বছর জেলায় মোট ৬৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন কৃষকরা। তিনি বলেন, কৃষকদের মাঝে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, ফুলে মৌমাছি বসলে ফুল ঝরে যায় এবং ফলন কম হয়। কিন্তু মৌমাছি বসলে ফুলের পরাগায়ন বেশি হয় এবং ফলনও বৃদ্ধি পায়। মৌমাছির মাধ্যমে বক্স পদ্ধতিতে মধু আহরণ করে কৃষি খাতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।