সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে ‘কামলার হাট’
হাড় কাঁপানো শীতে বিপন্ন দিনমজুরের জীবনযাত্রা
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
অভাবের তাড়নায় কাজের সন্ধানে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় আসা দিনমজুররা কাজ না পেয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থান হতে সাটুরিয়া (পশ্চিম-নান্দেশ্বরী) বাসস্ট্যান্ডে স্থায়ীভাবে ‘কামলার হাট’ বা মানুষের হাট নামে পরিচিত ওই স্থানে জড়ো হয় খেটে খাওয়া এসব মানুষ। ভোর হতে কয়েক শত দিনমজুর অপেক্ষায় থাকে কাজের সন্ধানে। তবে গত কয়েক দিনে প্রচণ্ড শীতে কর্মহীন হয়ে পড়ছে এসব মানুষ। একে তো অভাবের সংসার তার ওপর আবার কর্মহীন জীবন। সব মিলিয়ে এসব খেটে খাওয়া মানুষ দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা বিশেষ করে রাজশাহী, রংপুর, গাইবান্ধা, চাপাই, নবাবগঞ্জ, বগুড়া নাটোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পাবনা, সিরাজগঞ্জ থেকে কৃষি শ্রমিক, রাজমিস্ত্রির জোগালদার, রাস্তা নির্মান শ্রমিক সহ বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ এই হাটে বসেন কাজের সন্ধানে। প্রতিদিন ভোর থেকে সাটুরিয়ার (পশ্চিম নাদ্বেশ্বরী) ব্রিজের পাশেই অবস্থান নেন ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক। বছরের অন্য সময়গুলোতে একদিন অপেক্ষা করলেই উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত হতে আসা জমির মালিক ও ঠিকাদারসহ বিভিন্ন মানুষ তাদের চাহিদামত শ্রমিক দাম মিটিয়ে এখান থেকে তাদের নিয়ে কাজে লাগাত। তবে গত এক সপ্তাহে এখানকার পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। অনেকেই এসেছেন ২০ থেকে ২৫ দিন পূর্বে তখন তেমন একটা শীত ও ছিলো না। তাই সামান্য শীতবস্ত্র নিয়ে এসেছেন। আবার যারা ৭ থেকে ৮ দিন পূর্বে যারা এসেছে তাদের কাছেও ও তেমন শীত বস্ত্র নেই। মূলত যারা এদের কাজে নিয়োগ করে তারাই এদের থাকা খাওয়ার পাশাপাশি ও অনেক সময় প্রয়োজন মতো শীতবস্ত্রও দিয়ে থাকে। বর্তমানে মানিকগঞ্জসহ আশপাশের উপজেলায় তেমন কোনো কাজও নেই। ধান লাগানোসহ সরিষা পাকা শুরু হয়নি। শীতের কারণে অন্যান্য কাজও বন্ধ।
কাজের সন্ধানে আসা কর্মহীন এই মানুষগুলো প্রচণ্ড শীতে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। অর্থ অভাবে অনেকেই নিজ এলাকায় ফিরেও যেতে পারেছ না। রাজশাহীর ৫০ বছরের মধ্যবয়সি আঃ কাদের বলেন, ছেলেরা ভাত দেয় না। এলাকায় কোনো কাজ নেই। পেটের তাড়নায় কাজের জন্য ১০ দিন আগে এখানে এসেছি। এসেই প্রথম পাঁচ দিন কাজ করেছি এবং তারপর ঠান্ডা বাড়ার সাথে সাথে গেরাস্ত (মালিক) বলেছে এখন আর কাজ করাবে না। কিছু টাকা বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম আর কিছু টাকা আমার কাছে ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। তাই গত চার দিনে একবার করে খেয়ে আছি। একই জেলার মোঃ ইদ্রিস বলেন, ২০ দিন আগে এসে মাত্র দুই দিন কাজ করেছি। ১০ দিন ধরে বসা। পেটে খাবার নেই, কাউকে বলতেও পারছি না। আর টাকার অভাবে গ্রামেও ফিরে যেতে পারছি না। বগুড়ার আঃ করিম বলেন, ১৫ দিন আগে এসে সাত দিন কাজ করেছি, যা পেয়েছি তা থেকে কিছু টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার কাছে ৫০০ টাকা ছিল, সে টাকা চার দিনে খেয়ে শেষ। টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরের মোঃ সোহেল হোসেন বলেন, আগে আমরা খেয়ে ৪০০ টাকা রোজ কাজ করেছি। কিন্তু এখন ৩০০ টাকা তো দূরে থাক, আমাদের কেউ কাজেই নিচ্ছে না। এভাবে অনেক শ্রমিক বলেন, আমাদের এখন শুধু পেটের খাবার দিয়ে কেউ যদি সাহায্য করতেন তাতেই আমরা খুশি।
সার্বিক বিষয়টি নিয়ে সাটুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন আমরা দরিদ্র শ্রমিকদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেছি। পর্যায়ক্রমে আমরা আরো করব। আমাদের কার্যক্রম চলমান থাকবে।