ময়মনসিংহের সদর ও ত্রিশালে একদিনে ছিনতাইকারীর হাতে এক প্রতিবন্ধী কিশোরসহ দুই অটোরিকশাচালক খুন হয়েছে। এদিকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে ছিনতাইকালে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক অটোরিকশা চালক নিহত হয়েছে।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের কারীর মিল নামক এলাকা থেকে একটি এবং একই দিন দুপুরে জেলার ত্রিশাল উপজেলায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে একটি কলা খেত থেকে অপর একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে নাজিমুদ্দিন (৩৯) ও জেলার ত্রিশাল উপজেলার সদর ইউনিয়নের কোনাবাড়ী গ্রামের নদীর পাড় এলাকার বাবুল মিয়ার ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী রাকিব (১৪)। তারা দু’জনই পেশায় অটোরিকশা চালক।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান সারাদিন অটোরিকশা চালিয়ে নাজিমুদ্দিন রাত ১১টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে গোপালনগর গ্রামের কারীর মিল নামকস্থানে পৌছলে নাজিম উদ্দিনকে ছিনতাইকারীরা এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে উদ্ধার করে নাজিমুদ্দিনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে পথে সে মারা যায়।
স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করে ঘাগড়া তালতলা এলাকা থেকে অটোরিকশাসহ এক ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। পরে রাতে অভিযান চালিয়ে আরো দু’জনসহ মোট তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা দায়ের প্রত্রিয়াধীন আছে বলেও জানান তিনি। এদিকে ত্রিশাল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু বকর সিদ্দিক জানান, রাকিব শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিল। সে হাঁটতে পারতেন না। গত সোমবার রাকিব অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখোঁজি করে। কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ঘটনার দিন দুপুরের পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে একটি কলা খেতে মরদেহ দেখে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদোহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। আবু বকর ছিদ্দিক আরো বলেন, রাকিবকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। রাকিবের অটোরিকশার কোনো সন্ধ্যান মেলেনি। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে ছিনতাইকালে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে অটোরিকশাচালক জসিম মুন্সী (৪০) নিহত হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের কবুতরখোলা দারুল উলুম মাদ্রাসা-সংলগ্ন কবুতরখোলা-রাঢ়ীখাল রাস্তার নির্জন এলাকায় এই হত্যার ঘটনা ঘটে। অটোরিকশা চালকের চিৎকারে স্থানীয় জনতা ছিনতাইকারী মোঃ আলীকে (৩৫) আটক করে র্যাব-১০ এর কাছে সোপর্দ করে। নিহত অটোরিকশাচালক জসিম মুন্সী ভাগ্যকুল ইউনিয়নের মান্দ্রা গ্রামের মৃত ছালাম মুন্সীর ছেলে। ঘাতক মোঃ আলী ঢাকার ঢালকানগর এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে। স্থানীয়রা জানায়, ছিনতাইকারী মোঃ আলী নিহত অটোরিকশা চালকের একই এলাকার মান্দ্রা গাজীবাড়ীর আক্কেল গাজীর নাতি। সে কয়েক দিন আগে তার নানা বাড়িতে বেড়াতে আসে।
গত মঙ্গলবার রাতে জসিম মুন্সীর অটোরিকশাটি ভাড়া করে তিন থেকে চারজন। কবুতর খোলা প্রাইমারি স্কুলের পাশ দিয়ে রাঢ়ীখাল যাওয়ার রাস্তার নির্জন এলাকায় এসে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে তারা। এ সময় জসিম মুন্সী বাধা দিলে তাকে ছিনতাইকারী মোঃ আলী পেটের ডান দিকে ছুরিকাঘাত করে। জসিম মুন্সীর চিৎকারে ছিনতাইকারী মোঃ আলী দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পরে স্থানীয়রা দৌড়ে এসে ঘাতক মোঃ আলী আটক করে স্থানীয় কালাম মেম্বারের বাড়িতে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা গুরুত্বর আহত জসিম মুন্সীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জসিমকে মৃত ঘোষণা করেন।
শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্থানীয়রা একজনকে আটকের পর র্যাবে সোপর্দ করে। পরে থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।