দিনে-রাতে একের পর এক কেটে নেয়া হচ্ছে ৪টি পাহাড়। এসব পাহাড় কেটে ডাম্প ট্রাকে বালু ও মাটি নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটার এ ভয়াবহ কর্মযজ্ঞ চলতে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। উল্টো বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা পাহাড় কর্তনকারীদের সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চাইল্লাতলী বারিয়াপাড়ার ৪টি পয়েন্টে পাহাড় কাটার সিন্ডিকেটের প্রধান শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে রেঞ্জ কর্মকর্তার রয়েছে দহরম মহরম সম্পর্ক। কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ির চাইল্লাতলী এলাকায় পাহাড় কাটার এ ঘটনা চলছে। এলাকাটি কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের পানেরছড়া রেঞ্জের পানেরছড়া বন বিটের আওতাধীন। সরেজমিন দেখা গেছে, রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির চাইল্লাতলী স্টেশনে রাস্তার পাশে মজুত করা হয় পাহাড়ি বালু। পূর্ব পাশের বারিয়াপাড়া এলাকার ৪টি পয়েন্ট থেকে পাহাড় কেটে ডাম্প ট্রাক যোগে রাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলে পাহাড়ি বালু পরিবহন। স্টেশনে মজুত করা বালি সারাদিন ডাম্প ট্রাক যোগে বিক্রি করা হয় কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন স্থানে। বারিয়াপাড়ার মুফিজুর রহমান, আবদুল মান্নান, শাহাবুদ্দিন ও আবদুল মঈনের দখলীয় পাহাড় থেকে ডাম্প ট্রাক যোগে মাটি নিয়ে পাচার করা হয়।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম জানান, চাইল্লাতলীর বারিয়াপাড়ার ৪টি পয়েন্টে থেকে পাহাড় কেটে বালু বিক্রি করেন চাইল্লাতলী বারিয়াপাড়া এলাকার মৃত আমীর আলীর পুত্র শাহাবুদ্দিন (৩০), মৃত মোহাম্মদ কালু ওরফে কালু ফকিরের পুত্র ফিরোজ ও মফিজুর রহমান, মৃত মছন আলী ওরফে মছন ফকিরের পুত্র আবদুল মান্নান, মৃত শওকত আলীর পুত্র জসিম উদ্দিন ওরফে সোনা মিয়া এবং মৃত মেহের আলীর পুত্র আবদুল মঈন। এর মধ্যে শাহাবুদ্দিন ও জসিম উদ্দিনের রয়েছে ২টি ডাম্প ট্রাক। ওই ডাম্প ট্রাক দুটি নিয়ে নির্বিচারে পাহাড় কেটে পাচার করা হচ্ছে বালু ও মাটি।
এদিকে এলাকাবাসীর মৌখিক অভিযোগ পেয়ে পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শন করেছেন পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চাইল্লাতলী বারিয়াপাড়া এলাকায় ৪টি পাহাড় কাটার সত্যতা পাওয়া গেছে। সেখানে পাহাড় কেটে ডাম্প ট্রাক যোগে মাটি নিয়ে যাওয়ার আলামত দৃশ্যমান। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সারারাত সেখানে পাহাড় কেটে ডাম্প ট্রাক যোগে মাটি পাচার করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের কেউ সেখানে যান না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহাবুদ্দিন পাহাড় কাটায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।
জানতে চাইলে পানেরছড়া বন বিট কর্মকর্তা মো.জলিলুর রহমান বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে ২টি মামলা দিয়েছি, এরপরও তার পাহাড় কাটা থামানো যাচ্ছে না। তবে আমরা টহল জোরদার রেখেছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি নিজেই শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি, তার গাড়িও জব্দ করেছি। পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড় কাটা হচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটা বন্ধ আছে। কয়েকদিন আগেও আমি সেখানে গিয়েছি, কিন্তু পাহাড় কাটা দেখা যায়নি। প্রয়োজনে আবারো যাওয়া হবে।’
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘পাহাড় কর্তনকারীদের কোনো ছাড় নেই। খবর পেলেই অভিযান চালানো হচ্ছে। কয়েকদিন আগেও আমি নিজে সেখানে গিয়ে অভিযান চালিয়েছি। এছাড়া বন বিভাগের কেউ জড়িত থাকলে আমাকে জানাবেন, আমি ব্যবস্থা নেব।