পাকিস্তানের পাল্টা বিমান হামলায় ইরানে সাত নারী-শিশু নিহত

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ইরানে এবার পাল্টা বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এতে কমপক্ষে ৭ নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন। বেলুচিস্তান প্রদেশে ইরানের হামলার জবাবে গতকাল এই হামলা চালিয়েছে পরমাণু শক্তিধর এই দেশটি। পাকিস্তান অবশ্য ইরানের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদের লক্ষ্য করে পাকিস্তান গতকাল হামলা চালিয়েছে বলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। পাকিস্তানের ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জঙ্গি ঘাঁটিতে ইরান আক্রমণ করার দুই দিন পরে পাকিস্তান এই হামলা চালাল।

ইরানি মিডিয়ার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের একটি গ্রামে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে তিন নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছে। নিহতরা সবাই ইরান বহির্ভূত নাগরিক। পাকিস্তানি মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চালানো এই অভিযানের সময় বেশ কিছু সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।

এছাড়া এই অভিযানকে ‘সন্ত্রাসী আস্তানাগুলোর বিরুদ্ধে অত্যন্ত সমন্বিত এবং বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে সামরিক হামলা’ হিসাবেও বর্ণনা করেছে মন্ত্রণালয়। এতে আরো বলা হয়েছে, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করে পাকিস্তান। তবে গতকালের এই হামলার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের নিজস্ব নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা। এটি সব কিছুর ওপরে এবং এই বিষয়ে কোনো আপস করা যায় না।’ পাকিস্তানের একটি গোয়েন্দা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সামরিক বিমানের মাধ্যমে এই হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের বাহিনী ইরানের অভ্যন্তরে বেলুচ জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।’

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘হামলার টার্গেটে থাকা জঙ্গিরা বিএলএফের অন্তর্ভুক্ত।’

এদিকে তেহরান ইসলামাবাদের কাছে সর্বশেষ এই হামলার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে বলে অজ্ঞাত এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিম। এর আগে, মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ আল-আদলের দুটি ঘাঁটিতে বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ইরানের চালানো এই হামলায় পাকিস্তানে অন্তত দুই শিশু নিহত ও আরো তিনজন আহত হন। পরে বেলুচিস্তান প্রদেশে ইরানের বিমান হামলা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে ইসলামাবাদে নিযুক্ত তেহরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে পাকিস্তান। একই সঙ্গে তেহরান থেকে নিজ রাষ্ট্রদূতকেও প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটি। গত বুধবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ এই তথ্য জানান। ওই সময় তিনি বলেন, ‘ইরান থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। এছাড়া পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত, যিনি বর্তমানে তেহরান সফর করছেন তিনি আপাতত আর ফিরে নাও আসতে পারেন।’

হামলার পর ইরানকে যে বার্তা দিল পাকিস্তান : ইরানের সিস্তান-বালোচিস্তান প্রদেশে হামলার পর তেহরানকে সতর্কবার্তা দিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই বার্তায় বলা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবারের হামলার জবাবে ইরান যদি ফের পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আক্রমণ করে, তাহলে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক চরম উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাবে।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে পাকিস্তান ইরানের সিস্তান-বালোচিস্তান প্রদেশে খুবই সুসংগঠিত এবং সুনির্দিষ্টভাবে সামরিক হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান সবসময় তার ভৌগলিক নিরাপত্তা, জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং এসব ইস্যুতে কখনও আপস করে না। আজকের হামলার মূল কারণও এটাই।’

ইরানকে ‘ভাতৃপ্রতিম’ দেশ উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আর ও বলা হয়, ‘ইরান আমাদের প্রতিবেশী এবং ভাতৃপ্রতিম দেশ। ইরানের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও শ্রদ্ধা পাকিস্তানের রয়েছে। কিন্তু বহু বছর ধরে আমরা বলে আসছি যে পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা, যারা নিজেদের ‘সারমাচার’ বলে দাবি করে ইরানে তাদের নিরাপদ স্বর্গ তৈরি করেছে। দেশটির এমন সব জায়গায় তারা সামরিক স্থাপনা ও আস্তানা তৈরি করেছে, যেসব এলাকায় ইরানের কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই সন্ত্রাসীদের দমনে তেহরানের কোনো পদক্ষেপ আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয়নি।’ ‘আমরা ইরানকে অনুরোধ জানাচ্ছি, আজকের হামলার জবাবে তারা যেন পাকিস্তানের অভ্যন্তরে পাল্টা কোনো হামলা আর না চালায়। ইরান যদি এ অনুরোধ না রাখে, তাহলে তার ফলাফল খুব খারাপ হবে এবং দুই ভাতৃপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক চরম উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাবে।’