কুমিল্লার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এক গ্রাহকের হিসাব থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে সিটি ব্যাংকের কুমিল্লা ও ঢাকাসহ বিভিন্ন শাখার পৃথক চারটি হিসাব নম্বরে ট্রান্সফার করে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কুমিল্লা শাখার গ্রাহক কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এ কর্মরত লাইনম্যান মো. নাজমুল হক। তিনি ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর উপজেলার ভৈরবা গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে। এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এ কর্মরত লাইনম্যান মো. নাজমুল হক ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তার প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ১৫ লাখ টাকা লোনের জন্য আবেদন করলে সমিতি কর্তৃক উক্ত লোন মঞ্জুর হয়। পরে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ কর্তৃক সমিতির অগ্রণী ব্যাংকের কুমিল্লা নগরীর পদুয়ার বাজার শাখার হিসাব থেকে গত ২ জানুয়ারি নাজমুল হকের নামে ১৫ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। উক্ত চেকের মাধ্যমে নাজমুল হক তার নামীয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের হিসাবে (নং- ১৪১১০৩০১২৩২৬৬) লোনের ১৫ লাখ টাকা জমা করা হয়। এরই মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন (নং- ০১৭১৬৯৫৪০৮৮) হারিয়ে যায়। এতে তিনি উক্ত মোবাইল ফোনে ডাচ্-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং নেক্সস-পে অ্যাপসটি বন্ধ করতে ওই ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার ১৬২১৬ নম্বরে ফোন করলে তিনি জানতে পারেন- তার নামীয় ব্যাংকের হিসাব নম্বর হতে সিটি ব্যাংক লিমিটেডের কয়েকটি হিসাব নম্বরে টাকা ট্রান্সফার হয়েছে। এতে কাস্টমার কেয়ার থেকে তাকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। পরে তিনি ডাচবাংলা ব্যাংক লি. হতে তার নামীয় ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করেন এবং দেখেন তার নামীয় ১৪১১০৩০১২৩২৬৬ হিসাব নম্বর থেকে ২ জানুয়ারি হতে ৬ জানুয়ারির মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সিটি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ৪টি হিসাব নম্বরে মোট ১২ লাখ ৪৮ হাজার ১২২ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে ট্রান্সফার করে নেয়া হয়েছে। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, ডাচবাংলা ব্যাংকে তার নামীয় উক্ত হিসাব হতে সিটি ব্যাংকের ঢাকার নিকুঞ্জ খিলক্ষেত শাখার জাহিদুল হক রনি নামে এক গ্রাহকের ২৩০৩৮৭৬২০৪০০১ হিসাব নম্বরে ৫ লাখ টাকা, একই ব্যাংকের কুমিল্লা শাখার ইমতিয়াজ আহাম্মদ নামের গ্রাহকের ২৩০৪০২৭৫৬৪০০১ হিসাব নম্বরে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১২২ টাকা, ঢাকাস্থ সিটি ব্যাংকের যাত্রাবাড়ি শাখার সফিকুল ইসলাম নামে এক গ্রাহকের ২৩০৩৯৮৮৫২১০০১ হিসাব নম্বরে ৩ লাখ টাকা এবং রংপুর শাখা সিটি ব্যাংকের মেহেরুন এগ্রো নামের গ্রাহকের ১৫০৩৬৩৫৮১৩০০১ হিসাব নম্বরে ১ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে ট্রান্সফার করে নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের গ্রাহক ও কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর লাইনম্যান মো. নাজমুল হক সাংবাদিকদের জানান, তিনি তার কর্মস্থল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু ব্যাংক থেকে এভাবে তার অজান্তে টাকা ট্রান্সফার করে আত্মসাৎ করায় তিনি হতবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান, এ টাকা না পেলে আমাকে পথে বসতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় অভিযোগ করেছেন বলেও জানান। এ বিষয়ে ডাচবাংলা ব্যাংক কুমিল্লা শাখার ডেপুটি ম্যানেজার মো. সোলায়মান জানান, আমাদের ব্যাংক থেকে অন্য একটি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে এভাবে টাকা ট্রান্সফারের অভিযোগ সঠিক নয়। এ বিষয়ে তদন্ত হলে বিষয়টি বের হয়ে আসবে। সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন জানান, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।