সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের কথা থাকলেও সেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ আরো এক সপ্তাহ পিছিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
গতকাল সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশিদ আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ানের মৃত্যু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টের বিস্তারিত আগামী সপ্তাহে জানা যাবে। মন্ত্রণালয়ের কাজ শেষ করে তারাই প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন। শিশু আয়ানের মৃত্যুর পর গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর বাড্ডা থানায় মামলাটি দায়ের করেন তার বাবা মো. শামীম আহমেদ। সেখানে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ তদন্ত শুরু হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। পুলিশ বলেছে, মামলায় ভুল চিকিৎসা ও অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত হতে পুলিশের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আদালতকেও জানানো হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পুলিশ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সুন্নতে খতনা করাতে গত ৩১ ডিসেম্বর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ানকে ভর্তি করায় পরিবার। সেখানে তাকে অস্ত্রোপচার পূর্ববর্তী এনেসথেসিয়া দেওয়ার পর টানা তিন দিন জ্ঞান ফেরেনি। পরে তাকে গুলশান-২ এর ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার দিকে মারা যায় শিশুটি। ঘটনার পর চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ তদন্তে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য তিন সদস্যের মধ্যে একজন মুগদা হাসপাতালের এনেসথেসিয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞ, আরেকজন মুগদা হাসপাতালেরই একজন সহকারী পরিচালক। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালকও রয়েছেন এ কমিটিতে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয় কমিটিকে। অন্যদিকে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের সব অনুমোদিত ও অননুমোদিত হাসপাতাল-ক্লিনিকের তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগের দিন ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর বাড্ডা এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হাসপাতালটিতে পরিদর্শনে গিয়ে ওই হাসপাতালের লাইসেন্সসহ জরুরি কাগজপত্র পাওয়া যায়নি বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দপ্তরের অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা এবং পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিকট নিবন্ধন/লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য কখনোই অনলাইন আবেদন করেনি। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রকার আইনানুগ নিবন্ধন অথবা লাইসেন্স ব্যতিরেকে চিকিৎসা সেবা নির্মাণাধীন ভবনে পরিচালনা করে আসছে, যা সরকারের প্রচলিত আইনের পরিপন্থি। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে হাসপাতালটি বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
তখন আমি জোর করে ওটি রুমে প্রবেশ করে দেখি যে, ডাক্তাররা আমার ছেলের বুকে হাত দিয়ে চাপাচাপি করছেন এবং আমার অনুমতি ছাড়াই তারা আমার ছেলের বুকের দুই পাশে ফুটা করে টিউব স্থাপন করেন। এরপরও কোনো কাজ না হওয়ায় তারা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আমার ছেলেকে দ্রুত গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন আমি আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার ছেলেকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলেও তারা আমার কথা না শুনে ওই হাসপাতালে নিয়ে যান।
এজাহারে তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, সেখানে নিয়ে আমার ছেলেকে লাইফ সাপোর্টে রাখেন তারা। আমি ৩১ ডিসেম্বর রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে প্রবেশ করে আমার ছেলের দেহ শীতল ও নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। হাসপাতালের প্রতি আমাদের অনাস্থা বাড়তে থাকলে আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার ছেলেকে অন্য কোনো হাসপাতালে নিতে চাইলে কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো কথাই কর্ণপাত না করে জোর করে তাদের হাসপাতালেই চিকিৎসা প্রদান করে।
তিনি বলেন, আসামিদের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণেই আমার ছেলের মৃত্যু হয়। আমার ছেলেকে কী ধরনের চিকিৎসা বা ওষুধ প্রয়োগ করেছে তা তারা অদ্যাবধি পর্যন্ত আমাদের সরবরাহ করেনি। আমার ছেলেকে দেখতে চাইলে নানা তালবাহানা করে ঠিক মতো দেখতে দিত না। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অধিক লাভবান হওয়ার জন্য আমার ছেলেকে ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ইউনাইটেড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রেখে অবহেলামূলকভাবে ভুল চিকিৎসা প্রদান করায় আমার ছেলের মৃত্যু হয়। অতঃপর তারা আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করে আমার ছেলের মৃতদেহসহ ৫ লাখ ৭৭ হাজার ২৫৭ টাকার একটা বিল ধরিয়ে দেয়।