চা পান করতে ভালোবাসেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। ক্লান্তি কাটাতে হোক, বন্ধুত্বের আড্ডায় হোক কিংবা আপ্যায়নে হোক চা পানে জুড়ি নেই। জীবনের শৈল্পিকতাও ফুটে উঠে এই চা পানের মধ্য দিয়ে। ঠিক তেমনি উত্তরের চা শিল্প সমৃদ্ধ জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় মেধাবী যুবক ওমর ফারুকের বানানো চা পানে প্রশংসা সবার মুখে। স্থানীয় ও পর্যটকরা তার চা খেয়ে প্রশংসা করছেন মুখে। তেঁতুলিয়ার সদর উপজেলার চৌরাস্তা বাজারে ফারুকে চায়ের দোকানটি হয়ে উঠেছে সবার কাছে সর্বাধিক পরিচিত। প্রতিদিন স্থানীয়রা চায়ের কাপে সময় কাটাতে ভিড় করছেন ফারুকের চায়ের হোটেলে। জানা যায়, এক সময়ের পতিত থাকা জমি এখন এ অঞ্চলে সবুজের চা বাগান। চা উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানও অর্জন করেছে দেশের উত্তরের এ জেলাটি। চা উৎপাদনের সঙ্গে শত শত কেজি উৎপাদিত চা গরম পানীয় চা হিসেবে পান করছে এ জেলার মানুষ। এখানকার ঘরে ঘরে চলে আসছে চা পানের রসদ। নাস্তা থেকে অতিথি আপ্যায়ন, হাট-বাজার, কর্মস্থলেই রয়েছে চা পানের সংস্কৃতি। নাস্তার টেবিলে গরম চা না হলে তৃপ্ত হয় না ভোজন বিলাস। বাড়িতে কিংবা অফিসে অতিথি আসলে চা ছাড়া হয় না আপ্যায়ন। ফলে এখানকার শহর ও গ্রামীণ হাট-বাজারের হোটেল কিংবা ছোট ছোট চায়ের দোকানগুলোতে বসে চায়ের চুমুকে আড্ডা দিতে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সি মানুষদের। তেমনি সুস্বাদু চা বানিয়ে ভোক্তাদের মন জয় করছেন এসএসসিতে লেটারমার্ক পাওয়া ওমর ফারুক। ভাগ্যের কারণে চায়ের হোটেলই হয়ে উঠেছে এ যুবকের রুজি রোজগার। দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি সময় ধরে চায়ের হোটেল করে আসছেন তিনি। বাজারের মধ্যে ভালো চা বানায় বলে প্রশংসার শেষ নেই। তার চায়ের হোটেলে গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভোক্তারা জমিয়ে তুলেন নিত্য জীবনের নানা গল্পের রসদ। রাজনীতি, নির্বাচন, এলাকার প্রেক্ষাপট, কর্মপরিকল্পনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ের উপরও চলে সমালোচনাও। স্থানীয়দের ছাড়াও পর্যটকদের কাছে ফারুকের চায়ের কদর অনেকের মুখে মুখে।
ওমর ফারুক জানান, ১৯৯৮ সালে এসএসসি লেটারমার্কে ভালো রেজাল্ট করলেও অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে আর পড়ালেখা চালাতে পারিনি। তারপর থেকে এ পেশাতে আসি। আমি চেষ্টা করি, ভোক্তাদের পছন্দের চা বানাতে। তারা আমার এখানে চা পান করে যখন বলেন ভালো চা, শুনে খুব আনন্দিত হই। লুৎফর রহমান পাশা, জামান আরশাদসহ কয়েকজন পর্যটক জানান, সত্যিই অসাধারণ এ অঞ্চলের চা। সংস্কৃতি ও অতিথি আপ্যায়নে চায়ের কদর এখানে বেশি। এখানে ফারুকের হোটেলে চা পান করে খুবই তৃপ্তি পেয়েছি। বিশেষ করে মালাই চা। দাম ২০ টাকা নিলেও এক সঙ্গে দু’বার দুই কাপ চা পান করেছি। আবার আসলে এখানে এসেই আবার চা পানের ইচ্ছা জানালেন তারা। স্থানীয় আশরাফুল ইসলাম, আতিয়ার রহমান, আহসান হাবিব, আশরাফ বাবু ও তারেক হোসেনসহ স্থানীয়রা জানান, আমাদের অঞ্চলটি চা উৎপাদনে যেমন খ্যাতি অর্জন করেছে। তেমনি এখানকার চা পান সংস্কৃতিও বাইরের অতিথিদের মুগ্ধ করেছে। বাইরে থেকে কোনো অতিথি আসলে প্রথমত চা পানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আপ্যায়ন। এখানকার যে কয়েকজন ভালো চা বানান, তার মধ্যে ওমর ফারুক। তার বানানো চা সুস্বাদু ও তৃপ্তিকর। তার দোকানের মালাই চা’র তো সেরকম স্বাদের। তাই ফারুকের চায়ের তুলনা হয় না। আমরা অতিথি আপ্যায়নেও চা পান করিয়ে থাকি। একই কথা এ অঞ্চলের মানুষদের। তেঁতুলিয়ার সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী বলেন, আমাদের অঞ্চলটি চা শিল্প এলাকা। তাই এখানে যারা ঘুরতে আসেন তারা সমতলের চা বাগান দেখে যেমন মুগ্ধ হোন, তেমনি এখানে হাট-বাজারে হোটেলে চা পান করে তৃপ্তি পান। হোটেলগুলোর মধ্যে চা বানানোর ক্ষেত্রে ফারুকের বেশ পরিচিতি রয়েছে। আমরা এখানে এসে চা পান করি ও অন্যান্য হোটেলগুলোতেও ভালো চা হয়। বিশেষ করে চা পান করানো আমাদের অতিথি আপ্যায়নও একটি ঐতিহ্য। তাই যারা এখানে আসেন তাদের আপ্যায়ন হিসেবে চা পান করানোর চেষ্টা থাকে সব সময়।