অভিযানের পর এক্সাভেটর লুট ও সিলগালা ভাঙা

কক্সবাজারে পাহাড় কাটার ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা

টুয়াক সাধারণ সম্পাদক পাশাসহ আটজন আসামি

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

কক্সবাজার সদর উপজেলায় বহুল আলোচিত পাহাড় কাটার দুই ঘটনায় পৃথক দুইটি মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। মামলা দুইটি আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে আরো আটজনকে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট মো. আবদুছ ছালাম বাদী হয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দুইটি দায়ের করেন। কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. কাইছার হামিদ মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট আইনে মামলাটি নথিভুক্ত করে অভিযুক্ত গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। এর মধ্যে কক্সবাজার বাইপাস সড়কের কলাতলী এলাকার বিকাশ বিল্ডিং এর পাহাড় কাটার ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারে সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে ৪ জনকে। এই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, উখিয়ার রাজাপালং এলাকার ছিদ্দিক আহম্মদের ছেলে মো. ইলিয়াছ, কলাতলী আদর্শ গ্রামের মৃত শাহাব উদ্দিনের ছেলে শাহ আলম, লাইট হাউজ পাড়ার মৃত হামিদ হোসেনের ছেলে সালামত উল্লাহ, সাহিত্যিকা পল্লী এলাকার মৃত আবদুল হামিদেরে ছেলে মো. ইউনুছ, হাজিপাড়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো. ফয়সাল, তারাবনিয়ার ছড়ার মৃত মো. আলীর ছেলে মো. সেলিম ও কলাতলী এলাকার মৃত জাফর আলমের ছেলে নুরুল আলম ভুট্টো। অন্যদিকে কলাতলীর সৈকতপাড়া এলাকায় পাহাড় কাটার ঘটনায় দায়ের করা মামলা এজাহারে শুধুমাত্র ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির পাশা পল্লবের নাম উল্লেখ রয়েছে। যেখানে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে আরো চারজনকে।

গত ১১ জানুয়ারি কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে বিকাশ বিল্ডিং এলাকা ও সৈকতপাড়ায় পাহাড় কাটার ঘটনা নিয়ে সচিত্র সংবাদ প্রকাশ করে। প্রকাশিত সংবাদ নজরে আসার পর গত রোববার ১৪ জানুয়ারি পরিবেশ আদালত কক্সবাজারের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ সংবাদটি আমলে নিয়ে মিস মামলা নং ০১/২০২৪ দায়ের করেন।

মামলার আদেশে আদালত উল্লেখ করেন, ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৯০(১)(গ) মতে অত্রাদালত উক্ত ঘটনা স্বপ্রণোদিত হয়ে আমলে নেয়ার এখতিয়ার রাখেন। উক্ত বিষয়ে সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার নিম্নে নয়- এমন কর্মকর্তা কর্তৃক ঘটনাস্থল পরিদর্শন পূর্বক ঘটনা সংঘটন সাপেক্ষে ঘটনার বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা আগামী ২১ জানুয়ারি সশরীরে হাজির হয়ে স্থিরচিত্রসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

মামলার পর পরই গত ১৫ জানুয়ারি কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে কলাতলীর বাইপাস এলাকার বিকাশ বিল্ডিং থেকে একটি এক্সাভেটর জব্দ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইউনুসের জিম্মায় দেয় প্রশাসন। একই সঙ্গে লাইট হাউজ এলাকায় পাহাড় কাটার স্পটটি সিলগালা করে দেয় প্রশাসন। কিন্তু ১৬ জানুয়ারি ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইউনুসকে মারধর এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে প্রশাসনের জব্দ করে জিম্মায় দেয়া এক্সাভেটর ছিনিয়ে নিয়ে যায় একদল অস্ত্রধারী। একই সঙ্গে লাইট হাউজ এলাকায় সিলগালা করে দেয়ার পর তা ভেঙে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির পাশা পল্লব।

এ ঘটনায় ১৭ জানুয়ারি ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইউনুস বাদী হয়েছে কক্সবাজার সদর থানায় একটি মামলা করেছে। যেখানে আসামি করা হয়েছে সাতজনকে।

পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলস এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, কেবলমাত্র মামলা করে যেন এই দায়ভার শেষ না করে প্রশাসন। পাহাড় কাটা বন্ধে যেন সর্বোচ্চ সজাগ থাকে।