গাজায় একদিনে পাল্টা হামলায় ২৪ ইসরায়েলি সেনা নিহত
জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের ২ মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে অভিযান চালানোর সময় পাল্টা হামলায় একদিনে ২৪ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। গাজা সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এবারই প্রথম একদিনে এতো বেশি সংখ্যক সেনা হারাল। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় একদিনে ২৪ জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছে বলে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গতকাল জানিয়েছে। এর মাধ্যমে গত বছরের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এক দিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সেনার মৃত্যু দেখল ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি সাংবাদিকদের বলেছেন, বিস্ফোরণে ২১ সেনা নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা একটি ট্যাংকে রকেট চালিত গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং একই সময়ে দুটি ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী সেগুলো ধ্বংস করার জন্য বিস্ফোরক স্থাপন করছিল। বিস্ফোরণের জেরে ভবনগুলো সৈন্যদের ওপর ধসে পড়ে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও ঘটনার বিবরণ এবং বিস্ফোরণের কারণগুলো বোঝার চেষ্টা করছি এবং তদন্ত করছি।’ এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছিল, দক্ষিণ গাজায় পৃথক হামলায় তাদের আরও তিন সেনা নিহত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল কিদরা রয়টার্সকে বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার খান ইউনিসের পশ্চিমাঞ্চলের গভীরে হামলা চালানোর পাশাপাশি বিমান, সমুদ্র এবং স্থলপথে বোমাবর্ষণ করে চলেছে। এছাড়া খান ইউনিসের একটি হাসপাতালে হামলা এবং চিকিৎসা কর্মীদের গ্রেপ্তারও করেছে ইসরায়েল। অবশ্য হামলার শিকার হাসপাতালের পরিস্থিতি নিয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনও কথা বলা হয়নি এবং ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্রের অফিস থেকেও কোনও মন্তব্য করা হয়নি। কিদরা বলেন, খান ইউনিসে গত রোববার রাতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। আর চিকিৎসা অবকাঠামো অবরোধের অর্থ হলো কয়েক ডজন মৃত ও আহত ব্যক্তিরা উদ্ধারকারীদের নাগালের বাইরে থেকে যান। এই পরিস্থিতিতে নিরপরাধ ফিলিস্তিনি ও চিকিৎসা কর্মীদের রক্ষা করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি সোমবার বলেছেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, তবে ‘আমরা আশা করি তারা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তা করবে এবং হাসপাতাল, চিকিৎসা কর্মী এবং রোগীদের পাশাপাশি নিরপরাধ লোকদের রক্ষা করবে, যতটুকু সম্ভব’। আরও কয়েক মাস যুদ্ধ চালানোর পর্যাপ্ত অস্ত্র আছে হামাসের চুক্তি ছাড়া জিম্মিদের উদ্ধার সম্ভব নয়, বললেন ইসরায়েলি কমান্ডাররা ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস যোদ্ধারা হাসপাতালে এবং এর আশপাশে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। যদিও হামাস এবং গাজার চিকিৎসা কর্মীরা এটি অস্বীকার করেছেন। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এদিকে কাতার এবং মিশরের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে গাজা থেকে সব জিম্মি মুক্তির অংশ হিসেবে হামাসকে দুই মাসের যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। মার্কিন সংবাদ সাইট ‘অ্যাক্সিওস’ গত সোমবার এক রিপোর্টে এ কথা জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তিটি হবে একাধিক পর্যায়ে; যার মধ্যে প্রথমে নারী ও পুরুষদের মধ্যে যারা গুরুতর অসুস্থ তাদের ৬০ এর বেশি মুক্তি পাবে। পরবর্তী পর্যায়গুলোতে নারী সৈন্যদের মুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হবে; এরপর কম বয়সি বেসামরিক পুরুষ, পুরুষ সৈন্য এবং মৃত জিম্মিদের দেহ ফেরত আনা হবে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, চুক্তির অধীনে ইসরায়েলে অনির্ধারিত সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্য থেকে মুক্তি পাবে, তবে সবাই নয়। প্রস্তাবটিতে যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত নয় তবে এতে গাজার প্রধান শহরগুলো থেকে ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি কমিয়ে আনা হবে এবং ধীরে ধীরে বাসিন্দাদের ভূখণ্ডের বিধ্বস্ত উত্তরে ফিরে আসার অনুমতি দেয়া হবে। ইসরায়েলের ওয়েবসাইট ‘ই-নেট’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চুক্তিটি বাস্তবায়নে প্রায় দুই মাস সময় লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওয়েবসাইটটি জানায়, সোমবার জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই চুক্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন।
প্রস্তাবের খবর আসার পর মার্কিন গণমাধ্যম জানায়, নতুন জিম্মি মুক্তি চুক্তি কার্যকর করার বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক হোয়াইট হাউসের সমন্বয়ক ব্রেট ম্যাকগার্ক মিশর ও কাতারের সঙ্গে বৈঠকের জন্য এই অঞ্চলে অবস্থান করছেন।
৭ অক্টোবর হামাসের রক্তক্ষয়ী হামলার সময় প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। ইসরায়েল বলছে, গাজায় এখনো প্রায় ১৩২ জন জিম্মি রয়েছে। এএফপি জানায়, ইসরায়েলি হিসেবে জিম্মিদের মধ্যে সেখানে অন্তত ২৮ জন নিহত জিম্মির মরদেহ রয়েছে। ৭ অক্টোবরের হামলার জবাবে ইসরায়েল নির্বিচারে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়ে গাজায় ২৫,২৯৫ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। এদের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু।