পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স
কক্সবাজারে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
আদালতে ১২১ গ্রাহকের মামলা
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
কক্সবাজার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কয়েক হাজার গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড কোম্পানির বিরুদ্ধে। কয়েক হাজার গ্রাহক বছরের পর বছর ধরে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির অফিসে ধর্ণা দিলেও তাদের জমা করা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে ১২১ জন গ্রাহক তাদের জমাকৃত ৫৬ লাখ ১৮ হাজার ৩৬১ টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাতের অভিযোগে কক্সবাজারের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। এছাড়া গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির হাতে প্রতারিত ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২১ জন আদালতে আশ্রয় নিলেও অধিকাংশই আদালতে আসতে চান না।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজারের পুলিশ পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাওহীদুল আনোয়ার বলেন, ‘মামলাটির আসামিদের কারও পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না থাকায় তদন্তে সময় হচ্ছে। এটি নিয়ে কাজ করছি, তবে আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা পেলে প্রতিবেদন দিতে সহজ হতো। তবে ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে আত্মসাৎ এর বিষয়টি সত্যাতা মিলেছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা। মামলায় পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড কোম্পানি ছাড়াও ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন যথাক্রমে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান একেএম শরীয়ত উল্লাহ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মুহাম্মদ ভূঁইয়া, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোরশেদুল আলম ছিদ্দিকী, উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জলিল, পরিচালক যথাক্রমে আলী হোছাইন, জামান আরা বেগম, সরওয়ার আলম, ডাক্তার নুরুল আকতার চৌধুরী, মো. নাঈম আবদুল্লাহ, মো. বেলাল হোসাইন, প্রফেসর সিরাজুল হক এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির কক্সবাজার জোনাল হেড কোয়ার্টারের ইনচার্জ মোহাম্মদ আলম।
এদিকে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গ্রাহকদের মাঝে ক্ষোভ, হতাশা ও পারিবারিক কলহ বিরাজ করছে। গতকাল গ্রাহকরা সাংবাদিকদের কাছে এসে টাকা আত্মসাৎ এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির হয়রানির কথা জানান।
মামলার বাদী কক্সবাজারের রামু উপজেলার ধলিরছড়া জেটিপাড়ার আব্দুস শুক্কুরের পুত্র মাহফুজুর রহমান জানান, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির তৎকালীন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাহক সমাবেশ করে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বহুমুখী লাভ, কল্যাণ ও দ্বিগুণ লাভের আশ্বাস দিয়ে তিনিসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষকে পলিসি খোলার জন্য প্ররোচিত করেন। এক পর্যায়ে তারা বিভিন্ন অংকে লাখ লাখ টাকা জমা করেন। কিন্তু পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তাদের জমাকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করছে কোম্পানির কর্মকর্তারা। আজ কাল করে বছরের পর বছর ঘুরিয়ে নানাভাবে হয়রানির পর এখন পুরো টাকাই অস্বীকার করছেন। যার কারণে বাধ্য হয়ে তারা ১২১ জন গ্রাহক তাদের পাওনা টাকা ফেরত পেতে এবং টাকা আত্মসাতে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মামলা করেছেন।
মামলার বাদী আরও জানান, টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তারা ১২১ জন আদালতে মামলা করলেও আরও হাজার হাজার সাধারণ মানুষ কোম্পানিটির হয়রানির শিকার হচ্ছে। এমনকি পারিবারিক কলহে অনেকের সংসার ভেঙেছে। সাধারণ মানুষের জমাকৃত কোটি কোটি টাকা ফিরিয়ে দিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পাশাপাশি জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড কোম্পানির কক্সবাজার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘পলিসি গুলো অনেক আগের, আমি মাত্র এক বছর আগে এখানে যোগদান করেছি। বিষয়টি আমি পিবিআইকে বিস্তারিত জানিয়ে এসেছি। এছাড়া এসব পলিসির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে।
যোগাযোগ করা হলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মুহাম্মদ ভূঁইয়া বলেন, ‘মামলা হওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। কিন্তু যে অভিযোগে গ্রাহকরা মামলা করেছেন তা ঠিক হয়নি। কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তাদের বীমা আইনের ৪০ ধারায় বীমা কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে হবে, এরপরই হয়তো তারা আদালতে যেতে পারে।