বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিজি

সমুদ্রের স্বাস্থ্য ভালো না, সাগরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে এসিডিটি

* সচেতন না হলে মেরিন ইকোসিস্টেমের বিশাল ক্ষতি হবে

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেছেন, সমুদ্রের স্বাস্থ্য ভালো না। সাগরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে এসিডিটির পরিমাণ। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিদেশের সাগরেও হচ্ছে। মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত অপচনশীল প্লাস্টিক সাগরের তলদেশে জমা হওয়ার ফলে এ সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় আমাদের সচেতন হতে হবে। অন্যথায় আমাদের বিশাল সমুদ্র সম্পদকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, আমাদের বিশাল সমুদ্র সম্পদ সম্পর্কে এখনো আমাদের অজানাই রয়ে গেছে। প্রতিদিন জনসংখ্যার যে খাবারটা দিতে হয় তার জন্য আমরা ফ্রেস ওয়াটার রিসোর্চ বা সমুদ্র তলদেশের উপর নির্ভরশীল। সে সম্পদ যদি উত্তোলন বা ব্যবহারের আগে নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আমাদের মেরিন ইকোসিস্টেমের বিশাল ক্ষতি হবে। এ বিষয়ের উপর গবেষণা চলছে। মাইক্রো প্লাস্টিক থেকে ন্যানো প্লাস্টিক পর্যন্ত আমরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা শণাক্ত করার চেষ্টা করছি কি কারণে সাগর দূষিত হচ্ছে। এবং এর প্রভাব কেমন হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্স (আইসিও)’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি উপরোক্ত কথা বলেছেন। আজ থেকে এ আন্তর্জাতিক কনফারেন্স শুরু হচ্ছে। ব্লু-ইকোনমি ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত দেশ ও বিদেশের গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করবেন। যেখানে ছয়টি বিষয়ের গবেষণার উপর আলোচনা হবে।

দেশ-বিদেশের সমুদ্র বিজ্ঞানী ও গবেষকদের একত্রিত করে তাদের অভিজ্ঞতা ও গবেষণার ফলাফলের মাধ্যমে সমুদ্র গবেষণার বর্তমান, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা এবং চ্যালেঞ্জসমুহ সম্পর্কে জানতে এ সম্মেলনের আসল উদ্দেশ্য। এছাড়া দেশের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সুনীল অর্থনীতির যে স্বপ্ন আমরা দেখছি তা বাস্তবায়ন ও গতিশীল করতে আন্তর্জাতিক সেমিনার বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন মহাপরিচালক। মাটি খুঁড়ে তিমির হাড় উত্তোলনের বিষয়ে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক বায়োলজিক্যাল বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, মৃত তিমির হাড়গুলো উত্তোলনের পর গবেষণার জন্য বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে রাখা হবে। পরবর্তীতে মেরিন অ্যাকুরিয়াম স্থাপন কাজ শেষ হলে সেখানে রাখা হবে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল কক্সবাজারের হিমছড়ি সংলগ্ন সৈকতে অর্ধ-গলিত মৃত তিমি ভেসে আসে। ভেসে আসার সময় তিমিটির ওজন ছিল প্রায় ৯ মেট্রিক টন, দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। আমরা এখনো নিশ্চিত না কেন তিমিটির মৃত্যু হয়েছে। তবে দুটি কারণকে আমরা শনাক্ত করেছি। একটি হচ্ছে সামুদ্রে চলাচল করা বড় জাহাজের সাথে ধাক্কা, আরেকটি হচ্ছে পানিতে অতিমাত্রায় ভাইব্রেশন। তা নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। একটি তিমিতে ছোট-বড় মিলে মোট ৩৫৪টি হাড় থাকে। এখন পর্যন্ত আমরা মাটির নিচ থেকে ১৩০টি হাড় সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আরো বলেন, কংকাল উত্তোলনের পর সেগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং রিএসেম্বলিং এর জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা এবং বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কারিগরি টিম গঠন করা হয়েছে। সার্বিক প্রক্রিয়া শেষ হলে গবেষণার জন্য কংকালটি বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে রাখা হবে। পরবর্তীতে বিওআরআই এর আওতায় মেরিন অ্যাকুরিয়াম স্থাপন কাজ শেষ হলে কংকালটি সেখানে রাখা হবে।

এ সময় বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।