সবজি চারার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে যশোর সদর উপজেলার আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গা গ্রাম। এ দুই গ্রামের দেড় শতাধিক কৃষক প্রতি মৌসুমের আট মাসে বিভিন্ন সবজির প্রায় ১২ কোটি চারা উৎপাদন করেন। যা বিক্রি করেন প্রায় ১৫ কোটিতে। এসব চারা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলিসহ বিভিন্ন সবজির মানসম্মত এসব চারা কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকরা আসছেন এ দুই গ্রামে। মানসম্মত চারা উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও মার্কেট লিঙ্কেজে সর্বাত্মক সহযোগিতা রয়েছে বলেও জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের দুটি গ্রাম আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গা। যশোর-চৌগাছা সড়কের পাশের এ গ্রাম দুটিতে এখন সবজি চারার রমরমা বেচাকেনা চলছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দূর-দূরান্তের জেলা থেকে কৃষকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সবজি চারা নিয়ে যাচ্ছেন। মানসম্মত চারা হওয়ায় এর সুনাম ছড়িয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, সারাদেশেই এই অঞ্চলের সবজি চারার সুনাম ছড়িয়েছে। আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গায় মৌসুমের ৮ মাসে প্রায় ১২ কোটি সবজি চারা উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রায় ১৫ কোটি টাকায় এসব চারা বিক্রি করে থাকেন কৃষকরা। এ চারা উৎপাদনে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং মার্কেট লিঙ্কেজ করতে তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে থাকেন। সরেজমিন যশোরের চৌগাছা সড়কের আব্দুলপুর গ্রামের রাস্তার দু’পাশে তাকালেই চোখে পড়ে, শত শত পলিথিন সেডে ঢাকা রয়েছে সবজির বীজতলা। মূলত কুয়াশা ও বিরূপ আবহাওয়া থেকে চারা রক্ষার্থে এই শেড তৈরি করেছেন কৃষকরা। বর্তমানে বাজারে ভালো মানের প্রতি হাজার ফুলকপির চারা ৮০০ থেকে ১৫০০ এবং বাঁধাকপির চারা মানভেদে ৫০০ থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ভালো দামে চারা বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষিরা। কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় কৃষকরা জানান, আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গা গ্রামের দেড় শতাধিক কৃষক বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলিসহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদন করেন। দুই গ্রামের ৪০ বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে প্রায় ১২ কোটি চারা উৎপাদন করা হয়। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন সবজির বীজ বপন শুরু হয়। প্রায় দেড় মাস পর চারা বিক্রির উপযোগী হয়। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে চারা বিক্রি। প্রথম ধাপে প্রতি হাজার চারা দেড় থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে চারার দাম কমতে থাকে। প্রতিটি বীজতলা থেকে চার থেকে পাঁচটি ধাপে সবমিলিয়ে ১২ কোটি চারা বিক্রি করতে পারেন কৃষকরা। সেই হিসাবে এখানে প্রায় ১৫ কোটি টাকার চারা বেচাকেনা হয়। আব্দুলপুর গ্রামের প্রথম চারা উৎপাদনকারী আরশাদ আলী মোড়ল জানান, প্রায় চার দশক আগে প্রথম সবজি চারা উৎপাদন শুরু করি। লাভজনক হওয়ায় তার দেখাদেখি অন্যরা চারা উৎপাদন শুরু করে। এখন অনেকেই ভালো চারা উৎপাদন করছেন। আর এখানে ভালো মানের চারা পাওয়া যায় বিধায় দূর-দূরান্ত থেকে চাষি ও পাইকাররা চারা কিনতে আসেন। আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম দেড় বিঘা জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপির চারা উৎপাদন করেছেন। তিনি জানান, এ জমিতে ছয় মাসে চারা উৎপাদন খরচ হয় ৬-৭ লাখ টাকা। যেখানে উৎপাদন হয় প্রায় ১৫ লাখ চারা। যার বাজার মূল্যে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা। তিনি আরও জানান, যশোরের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও ঝিনাইদহ, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, সাতক্ষীরা থেকে কৃষক ও সবজি চারার পাইকাররা তাদের চারা নিয়ে যান। দিনে দিনে বাড়ছে পরিচিতি ও বাজার। সবজি চারা কিনতে ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে আসা পাইকার নজরুল ইসলাম জানান, এখানে অনেক চাষি সবজি চারা উৎপাদন করেন। ফলে দেখেশুনে যাচাই-বাছাই করে বিভিন্ন প্রকারের মানসম্মত চারা কেনা যায়। আর এই এলাকার চারায় ফলনও ভালো। ফলে ফসল মার খাওয়ার ঝুঁকিও কম থাকে। যশোরের সবজি চারা গ্রামের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, এ অঞ্চলের সবজি চারা উৎপাদন ও বিপণনে আলাদা দৃষ্টি রয়েছে। কৃষকদের পাশে থেকে প্রতিনিয়তই প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষক, পাইকাররা এখানে চারা কিনতে আসছেন।