ঢাকা ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজধানীর বাজারদর

আগেই বেড়েছে রমজানের পণ্য সবজিতে কমেছে ৫-২০ টাকা

আগেই বেড়েছে রমজানের পণ্য সবজিতে কমেছে ৫-২০ টাকা

রোজা আসতে এখনো বাকি দেড় মাসের বেশি সময়। তবে এখনই বাজারে দাম বাড়ার তালিকায় সবার ওপরে রোজায় বেশি প্রয়োজন হয় এমন পণ্যের। বাজারে এখন ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এমন চিত্র ঘুরে দেখা গেছে।

ক্রেতারা বলছেন, রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীচক্র পুরোনো ছক কাজে লাগাচ্ছে। রমজাননির্ভর পণ্যের দাম তারা আগেই বাড়িয়ে নিচ্ছে। তাতে রমজানে নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হয় না। একই সঙ্গে দীর্ঘ সময় ভোক্তার পকেট কেটে অতিরিক্ত মুনাফা করা যায়। ক্রেতাদের অভিমত ‘রমজানের সময় প্রশাসনের তোড়জোড় বেশি থাকে বাজারে। সেজন্য ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে রাখছেন, যেন রমজানে আর না বাড়াতে হয়। তাতে এখনো লাভ, তখনো লাভ।’ এদিকে, বাজারে চালসহ সব ধরনের সবজি ও অন্যান্য বেশকিছু খাদ্যপণ্যও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। নির্বাচনের পরে প্রতি কেজি চালের দাম ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এখনো সে দাম স্বাভাবিক হয়নি। কিছু দোকানে ২ থেকে ৩ টাকা কমতে দেখা গেছে। তবে বেশিরভাগ দোকানে বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। রসুনের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা এবং আদা ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। আদা ও রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পেঁয়াজ এখনো বেশ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

সূত্র জানায়, রমজানকে ঘিরে সরকারের একাধিক সংস্থা তিন মাস আগেই বাজার তদারকিতে নেমেছে। তারা মোকাম থেকে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তদারকি করছে।

তবে সবচেয়ে অস্থিতিশীল রমজানের অন্যতম পণ্য ছোলার বাজার। গতবছর প্রতি কেজি ছোলা মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, যা এক মাস আগেও একই দাম দেখা গেছে। ওই ছোলা এখন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় উঠেছে।

একইভাবে প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ১০ টাকা বেড়ে ছোট দানার মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের মুগ ডালের কেজি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ১৫০ টাকার মধ্যে ছিল। একইভাবে অ্যাংকর ডালের দামও বেড়েছে।

নতুন করে বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহের থেকে ১০ টাকা বেশি।

বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম গত সপ্তাহে প্রতি লিটারে ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এরপর থেকে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা এবং পাম তেল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। আগের সপ্তাহের তুলনায় যা ৫ টাকা বেশি। এছাড়া প্রতি কেজি খোলা চিনি এলাকা ভেদে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা এ যাবৎকালের সবোর্চ্চ।

বাজারের মুদি দোকানিরা বলছেন, ‘ছোলা, ভোজ্যতেল, ডালের মূল্য মোকাম পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে। ফলে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। একেক পণ্যের দাম একেক অজুহাতে বেড়েছে। কিন্তু কোনোকিছুর দাম কমেনি। এদেশে আর কিছু কমে না, শুধু বাড়ে।’ এদিকে, কিছুদিন দাম একটু কমলেও ফের বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। বাজারে এখন গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা।

গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় প্রায় সব সবজিরই দাম কমেছে ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল বাজারে শিম ৬০-৮০ টাকা, সাদা ও বেগুনি শালগম ৩০-৪০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৪০ টাকা, টমেটো ৭০-৮০ টাকা, পেঁয়াজ কলি ৫০ টাকা, মটরশুঁটি ১১০-১২০ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, লাল মূলা ৪০ টাকা, দেশি গাজর ৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৯০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, ক্ষীরাই ৭০ টাকা, উচ্ছে ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩৫-৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, স্কোয়াশ ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, ধনেপাতা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর লাল বাঁধাকপি (রেড ক্যাবেজ) ৫০ টাকা, সাদা বাঁধাকপি ৪০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, ব্রকলি ৫০ টাকা, লাউ ৮০-১০০ টাকা করে বিক্রি করছে।

বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১০০০-১৪০০ টাকা, রুই মাছ ৩২০-৫০০ টাকা, কাতল মাছ ৩৫০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০-৬০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৭০০ -১২০০ টাকা, কাচকি মাছ ৪৫০ টাকা, কই মাছ ২০০-১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৩০০-১২০০ টাকা, বেলে মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫৫০-১২৫০ টাকা, শোল মাছ ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা, কক মুরগি ২৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৬৫ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ টাকা, গরুর মাংস ৬৫০-৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মুদি দোকানের সব পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। আজকে ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১৬৫ টাকা, খেসারি ডাল ১০৫ টাকা, বুটের ডাল ১০০ টাকা, ছোলা ১০৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৩ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৮ টাকা, খোলা চিনি ১৪০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় মসুর ডালের দাম বেড়েছে ৫ টাকা।

ডালের দাম নিয়ে জব্বার স্টোরের বিক্রেতা আজিজুল বলেন, মুসরের ডালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। হাইব্রিড মোটা ডাল আছে যেগুলোর দাম কম। কিন্তু দেশি ডালের দাম বেশি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত