কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলে পাহাড় কেটে পুকুর ভরাটের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী। গতকাল বিকালে খুরুশকুলের হামজারডেইল এলাকায় পুকুর ভরাটের স্থান পরিদর্শন করেন তিনি। জানতে চাইলে আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাহাড় কেটে পুকুর ভরাটের আলামত পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এর আগে খুরুশকুল হামজারডেইলে উঁচু পাহাড় কেটে ৩২ শতকের একটি শতবর্ষী পুকুর ভরাটের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করে পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল। এ ঘটনায় গত শুক্রবার দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশে তথ্যভিত্তিক সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। কামরুল হাসান, জাহেদুল ইসলাম, ইসহাক ও কাইয়ুম নামের ৪ ব্যক্তি পুকুরটি ভরাটের সঙ্গে জড়িত। পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল-এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘৩২ শতকের একটি শতবর্ষী পুকুর সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। এটি ভরাটে কেটে নেয়া হচ্ছে ৬০ ফুট উচ্চতার সরকারি পাহাড়। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।’ একই সঙ্গে পাহাড় কেটে পুকুর ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি কর্তিত পাহাড় ও ভরাটকৃত পুকুর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানান তিনি।
তোতকখালীতে কাটা হচ্ছে ৬ পাহাড় : মামুন-কাদের সিন্ডিকেট, মাটি চাপা পড়ে আহত শ্রমিক আশঙ্কাজনক : কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের তোতকখালী এলাকায় একে একে কেটে নেয়া হচ্ছে ৬ পাহাড়। প্রকাশ্যে এসব পাহাড় কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বালি ও মাটি। মামুন-কাদের সিন্ডিকেটের ৪টি ডাম্প ট্রাক যোগে দিনে-রাতে এসব বালু ও মাটি পাচার করা হচ্ছে। পাহাড় কেটে ডাম্প ট্রাকে তোলার সময় গতকাল শুক্রবার সকালে নুরুল ইসলাম কালু নামের এক শ্রমিক মাটি চাপা পড়ে। অন্য শ্রমিকরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে তাৎক্ষণিক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
আহত নুরুল ইসলাম কালু (১৮) পিএমখালীর উত্তর পরানিয়াপাড়ার ফরিদের দোকান এলাকার আবদুছ ছালামের পুত্র। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের বরাত দিয়ে আহতের বোন নাছিমা জানান, আহত কালুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আহত নুরুল ইসলামের মা লায়লা বেগম জানান, প্রতিদিনের মতো ডাম্প ট্রাক যোগে মাটি কাটতে যায় তার ছেলে। কিন্তু সকালে তিনি খবর পান তার ছেলে পাহাড়ের মাটি চাপা পড়েছে। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় শাহাবুদ্দিন জানান, তোতকখালীর সতেরকাটা এলাকায় ৩-৪টি ডাম্প ট্রাক নিয়ে পাহাড়ের মাটি ও বালু বিক্রি করেন মামুন, কাদের, ধলু, আমিন এবং বাবুল।
তারা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন যেমন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না, তেমনি স্থানীয় লোকজনও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করে না। তাদের ডাম্প ট্রাক যোগে মাটি পাচারের সময় শ্রমিক নুরুল ইসলাম মাটি চাপা পড়ে বলে তিনি জানান। এলাকাবাসীর মৌখিক অভিযোগ পেয়ে পাহাড় কাটার একাধিক স্থান পরিদর্শন করে পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘পিএমখালী ও তোতকখালীতে পাহাড় কাটার ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। এখানে সিন্ডিকেট করে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে মাটি ও বালু বিক্রি করা হয়। অবস্থা দেখলে মনে হয় পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই।’ দ্রুত যৌথ অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটা বন্ধ করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএমখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো: নুরুল আমিন জনবল সংকটের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত কাজ দেখাতে পারছেন না দাবি করে বলেন, ‘এরপরও তথ্য দিন, ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পাহাড় ধসে শ্রমিক আহতের ঘটনায় থানা পুলিশকেও অবহিত করুন।’