একুশে বইমেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অমর একুশে বইমেলা আসরের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এ বছর বইমেলা আয়োজনের স্থান নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মাসব্যাপী লেখক-পাঠকদের মিলনমেলাস্থলে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ শেষে চলছে নির্মাণ কাজ। হাতুড়ির টুংটাং আওয়াজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। অবকাঠামো তৈরির পাশাপাশি চলছে রঙের কাজ। গতকাল সরেজমিন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বিকভল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বইমেলা উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

বইমেলা স্থল ঘুরে দেখা যায়, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্টল ও প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বেশিরভাগ স্টল ও প্যাভিলিয়নের অবকাঠামো তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। যারা এখনও শেষ করতে পারেনি, তাদের কাজ চলছে বেশ জোরেসোরেই। অবকাঠামো তৈরির পাশাপাশি বেশিরভাগ স্টলে চলছে রঙ করার কাজ। এর সাথে একযোগে চলছে প্রকাশনীগুলোর নামফলক তৈরি ও ডেকোরেশনের কাজ।

বেশিরভাগ স্টলই তৈরি হচ্ছে কাঠ ও বাঁশের অবকাঠামোর উপর। তবে বড় বড় ও নামি প্রকাশনীগুলোর ভিত তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে ইট-সিমেন্ট। ইটের ভিতের উপর বাঁশ ও ফোম (পন্ডস) দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে দেয়াল। ছাদ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে টিন। এর নিচে পন্ডস দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা নকশা।

বিভিন্ন প্রকাশনী ও বিপণি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্টল। রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের স্টল। বইমেলার নিরাপত্তায় নির্দিষ্ট প্রবেশমুখ ছাড়া চারপাশে তৈরি করা হচ্ছে টিনের প্রাচীর। দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের সুশৃঙ্খল প্রবেশ ও বহির্গমন নিশ্চিতে তৈরি করা হচ্ছে বাঁশের ব্যারিকেড।

প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে স্টলে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিক হেলাল মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্টল তৈরি শেষে এখন রঙ করার কাজ চলছে। আগামীকালের মধ্যে রঙের কাজ শেষ হবে। আমরা বুঝিয়ে দেওয়ার পর স্টল মালিক ডেকোরেশনের কাজ করবেন। সব ঠিকঠাক থাকলে ৩০ তারিখের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।

কবে থেকে কাজ শুরু করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রায় সপ্তাহখানেক আগে শুরু করেছি। এখানে বেশিরভাগ স্টলের কাজই ২৩ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে।

প্যাভিলিয়নের ব্যানারে রঙের কাজ করা জামাল শেখ বলেন, আমি গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছি। প্যাভিলিয়নের অবকাঠামো প্রায় প্রস্তুত। আমার কাজ মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছে। কাল-পরশুর মধ্যেই শেষ করে ফেলতে পারব বলে আশা করছি।

লিপ ইয়ার বছর হওয়ায় এবার বইমেলা চলবে ২৯ দিন। এ বছর মেলায় ৫৭৩ প্রতিষ্ঠানকে মোট ৮৯৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮৬টি সাধারণ স্টল এবং ১০৯টি স্টল লিটল ম্যাগাজিন চত্বরকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি বছর মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়েছে। এর আগে, গত বছর ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

আয়োজকরা জানান, গত ২৩ জানুয়ারি ডিজিটালাইজড লটারি পদ্ধতিতে পুরনো এবং নতুন তালিকাভুক্ত প্রকাশনার জন্য স্টল বরাদ্দ করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত ৬০১টি সংস্থা ছাড়াও প্রায় ৭০টি নতুন প্রকাশনা নোটিশে সাড়া দিয়ে স্টল বরাদ্দ পেতে আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ২৩টি নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

এছাড়াও এবারের বইমেলা চলাকালে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এ বছর ১১টি বিভাগে ১৬ জনকে কবিতা, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ বা গবেষণা, অনুবাদ, নাটক, শিশুসাহিত্য বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, পরিবেশ বা বিজ্ঞান ক্ষেত্র, জীবনী ও লোককাহিনী ইত্যাদি বিভাগে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ দেওয়া হবে।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কার তুলে দেবেন বলে বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে।