দিনাজপুরে মাছের পোনা চাষ করে স্বাবলম্বী সাদেকা বানু

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মোঃ সিদ্দিক হোসেন, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) থেকে

দিনাজপুরে মাছের পোনা চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানু। ছোট পরিসরে শুরু করলেও বর্তমানে তিনি ৩১ একর জমিতে ২২টি পুকুরে জি-থ্রি রুইসহ বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনে স্বাবলম্বী হয়েছেন। প্রায় ২০টি পরিবারের জন্য করে দিয়েছেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। তার সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে মৎস্য চাষে ঝুঁকছেন। নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানুর এখন বার্ষিক আয় প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা।

২০১৫ সালে নিজ গ্রাম দিনাজপুর দক্ষিণ কোতোয়ালির মালিগ্রামে দুটি পুকুর লিজ নিয়ে তিনি রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকার্প, সাদাপুটি, তেলাপিয়া পোনা উৎপাদন শুরু করেন। প্রথম বছরেই সাফল্যের মুখ দেখেন তিনি। পরের বছর গ্রামের আরো তিনটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছের পোনা উৎপাদনের বিস্তৃত বাড়ান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানুকে। বর্তমানে নিজ গ্রামসহ পার্শ্ববতী এলাকা বড়গ্রাম ও কমলপুরে ৩১ একার জমিতে ২২টি পুকুরে জি-থ্রি রুইসহ বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করছেন তিনি। সাদেকা বানু বলেন, ‘আমার ফিরে তাকানোর সময় নেই। এখন আরো এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। দুইটি পুকুর থেকে আমার এখন ২২টি পুকুর। ৩১ একার জমিতে এই ২২টি পুকুরের মধ্যে তিনটি পুকুরে গত বছর থেকে জি-থ্রি রুই মাছের পোনা উৎপাদন করছি। এতে অনেক সাফল্য এসেছে। এ পোনা মাছের চাহিদাও অনেক। আমি হিসেব করে দেখেছি, সব বাদ দিয়ে আমার এখন বার্ষিক আয় থাকে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। ভাবছি, আরো কিছু পুকুরে এই জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করব।’ স্বামী বেলাল হোসেনও অন্যপেশা ছেড়ে স্ত্রী’কে সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। পুকুরগুলো তত্ত্বাবধায়নে কাজ করছেন তিনি। গত বছর থেকে পরীক্ষামূলক তিনটি পুকুরে ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ বা জি-৩ রুই এর পোনা উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। এতেও ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। রুই মাছের চেয়ে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ বেশি বৃদ্ধি পায় জি-৩ রুই এর। তাই, জি-৩ রুই পোনার ব্যাপক চাহিদা থাকায় পোনা মাছ বিক্রেতারা তার পুকুরে ঝুঁকতে থাকে। এরই মধ্যে তার পুকুরের পাছের পোনা জেলা ছাড়িয়ে সারাদেশে সরবরাহ শুরু হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে পুকুর পাড়ে কথা হয় পোনা মাছ নিতে আসা অনেকের সঙ্গে। তারা পোনা মাছ বিক্রির জন্য ছুটে চলেন গ্রাম থেকে গঞ্জে। এতে যা লাভ পাই, তাদেই সংসার চলে।’ নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানুকে এ বিষয়ে প্রথম থেকেই সহায়তা করে আসছে, মহিলা বহুমুখী কেন্দ্র এমবিএসকে ও পল্লী কর্মণ্ডসহায়ক ফাউন্ডেশন। মাছের পোনা উদ্যোক্তা তৈরিতে মহিলাদের দিয়ে সমিতির মাধ্যমে কাজ করছে, প্রতিষ্ঠান দুটি। শ্যামলী মহিলা সমিতি নামে এমন একটি সংগঠনের সদস্য সাদেকা বানু; যার সদস্য সংখ্যা ১৯৪০ জন। ‘সাদেকা বানু তাদের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা এখন জেলা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও যাচ্ছে মাছ চাষের জন্য। দিনাজপুর জেলা মৎস্য বিভাগ। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামান জানান, ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ বা জি-৩ রুই এর পোনা উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন, নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানু। তার সাফল্যে এখন অনেকে অনুপ্রাণিত। আমরা সব রকম প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে তাকে সহযোগিতা করছি। অন্যরাও চাইলে এ সহায়তা পাবে। আমরা চাই নারীরা আরো এগিয়ে আসুক এ ধরনের কার্যক্রমে। এসব কাজে তাদের সাফল্য পাওয়ার বেশি সুযোগ থাকে।’ দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে ছুটে আসছেন, তার মাছের খামার দেখার জন্য।