ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি
‘শরীফ থেকে শরীফা’র পাতা ছিঁড়ে ফেলা রাষ্ট্রদ্রোহিতা
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাবের সপ্তম শ্রেণি বইয়ের ‘শরীফ থেকে শরীফা’ অধ্যায়টির পাতা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা রাষ্ট্রদোহিতার সমান বলে মন্তব্য করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত স্কুল পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নিয়ে ‘মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বিচারপতি শামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফসহ অন্যান্যরা। বক্তব্যে বিচারপতি শামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, সবাই আসিফ মাহতাবকে শিক্ষক হিসেবে সম্বোধন করলেও আমি তাতে একমত নই। তার কর্মকাণ্ড শিক্ষকসুলভ নয়। তিনি যা করেছেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান।লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রকাশিত সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে মানুষে মানুষের সাদৃশ্য ও ভিন্নতা অধ্যায়ে শরিফার গল্প নামে একটি রচনা রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সম্পর্কে যথাযথ ধারণা দেওয়ার জন্য। পাঠ্যপুস্তকে মুদ্রণ এবং তথ্যগত ত্রুটি সম্পর্কে বিভিন্ন দৈনিকের কিছু প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে, যা নতুন কোনো বিষয় নয়। এ ধরনের ত্রুটি ধরা পড়লে তা সংশোধন করা যায় এবং করা উচিতও পাঠ্যপুস্তকে এ ধরনের ত্রুটি কখনো কাম্য নয়।
তিনি বলেন, গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক সেমিনারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব আলোচনার এক পর্যায়ে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান বইয়ের শরীফ থেকে শরীফা গল্পটি ছিঁড়ে ফেলে। গণমাধ্যমের সামনে তিনি যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, এটাকে হালকাভাবে দেখার কোনো কারণ নেই। তার এই কর্মকাণ্ডের পর ঝিম মেরে বসে থাকা হেফাজতিরা এবং তাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক সংগঠন মাঠে নেমে পড়েছে। শাহরিয়ার কবির বলেন, এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন দেশে একটি গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মকে ব্যবহার করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রবণতা রয়েছে, তারপরও বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য তিনি কমিটি করেছেন মওলানা ও মুফতিদের নিয়ে, যেখানে রাখার প্রয়োজন ছিল জীববিজ্ঞানী, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের।
১৯ জানুয়ারির সেমিনারে মৌলবাদী শিক্ষকদের ফোরামের নেতারা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি বিষোদ্?গার করে বলেছেন নতুন পাঠক্রমের সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে, কারণ এটি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য, ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য যা তাদের ভাষায় ইসলামবিরোধী। এই অনুষ্ঠানের বক্তাদের সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য ইউটিউবে এখনও প্রচারিত হচ্ছে। অভিযুক্ত শিক্ষক তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি ও মর্যাদাবিষয়ক পাঠে সমকামিতা প্রচারের অভিযোগ এনেছেন বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। তিনি জানতেন এর প্রতিক্রিয়া কী হবে। তিনি বলেছেন ইসলামের মর্যাদা রক্ষার জন্য নাকি এ কাজ করেছেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক নাগরিক সমাজের ধারাবাহিক আন্দোলনের কারণে এবং সাধারণ পাঠক্রম যুগোপযোগী করার প্রয়োজনে বর্তমান পাঠক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তা সাধারণভাবে প্রশংসিত হলেও ৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সহযোগীরা যেভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছে এটাকে কঠোরভাবে দমন করা না হলে দেশ ও জাতির সামনে সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে। আমরা আশা করব পাঠ্যপুস্তকে মুদ্রণ ও তথ্যগত যেসব ভ্রান্তি আছে তা দ্রুত নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে, কিন্তু কোনো অবস্থায় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দাবি মেনে কোনো রচনা বা বিষয় প্রত্যাহার বা পরিবর্তন করা যাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার কবির বলেন, লিঙ্গবৈষম্যের ব্যাপারে যে বিতর্ক এখন তৈরি করা হয়েছে, এগুলো মূল তর্ক নয়। যারা বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন, তাদের মূল বক্তব্য হলো ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি থাকতে পারবে না। তাদের ভাষায়, ইসলামে তৃতীয় লিঙ্গের কোনো স্বীকৃতি নেই। অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি না চাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের অস্তিত্বকে আঘাত করা হয়েছে। সরকার যদি এর সাথে সমঝোতা করে তবে সেটা বাংলাদেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করবে। আমরা শিক্ষায় এমন সাম্প্রদায়িকীকরণ, মৌলাবাদিতার আঘাত দেখতে চাই না।