হাতবদলে আলু-পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে চার গুণ দামে

আবারো সেঞ্চুরিতে পেঁয়াজ

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে আলুর বাজার আগে থেকেই চড়া। মাস খানেক ধরে আলুর দাম প্রতি কেজি ৫০ টাকায় স্থির ছিল। তবে গতকাল আরেক দফা দাম বেড়ে আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। কোনো কোনো বাজারে ৬৫ টাকাও চাওয়া হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহের সংকটে আলুর দাম বেড়েছে। এদিকে পেঁয়াজের কেজি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। পুরোনো পেঁয়াজের কেজি ৯০ টাকা। এক কেজি আলু ও পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ যথাক্রমে ১৫ টাকা ৯৫ পয়সা ও ২৩ টাকা ৮৭ পয়সা। অথচ হাতবদল হয়ে রাজধানীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার গুণ বেশি দামে। এটা কতটুকু যৌক্তিক, তা দেখার যেন কেউ নেই! ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশের বাজারে হু হু করে বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। নতুন বছরে জানুয়ারির শুরুতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দামও কেজিপ্রতি নেমে আসে ৮০ টাকায়। তবে আবারও নতুন করে বাজারে পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। খুচরা বাজারে দাম বাড়তে বাড়তে আবারও শতক হাঁকিয়েছে পেঁয়াজের কেজি। গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দামবৃদ্ধির এ চিত্র দেখা গেছে। এসব বাজারের বেশিরভাগ দোকানেই নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। পুরোনো পেঁয়াজের কেজি ৯০ টাকা। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে রামপুরা বাজারে বিক্রেতা এনামূল হোসেন বলেন, মুড়ি কাটা শেষ, নতুন হালি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে কিছুদিন সময় লাগবে। তিনি বলেন, মোকামে দাম বেড়েছে। পাবনায় প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩২০০ থেকে ৩৪০০ টাকা কেনা পড়ছে। যা আগের থেকে ৪০০ টাকা বেশি। মূলত গতকাল থেকেই এমন দাম বেড়েছে। এদিকে, পাবনায় স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানকার মোকামগুলোতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগে সেখানে বিভিন্ন হাটে পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হতো ৬০-৭০ টাকায়। সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুর হাটসহ বিভিন্ন হাটে একই পেঁয়াজ এখন ৭৫-৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগাম পেঁয়াজের উৎপাদন শেষ হয়ে আসার কারণে গত তিনদিনে পাবনার বিভিন্ন উৎপাদন সংশ্লিষ্ট এলাকায় পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কৃষক ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে এখন আগাম বা মুড়ি কাটা জাতের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মাস দেড়েক আগে এই পেঁয়াজ হাটে উঠেছে। সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলার কৃষকরা যে মুড়ি কাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন, তার বেশিরভাগই এরই মধ্যে তোলা হয়ে গেছে। ফলে বাজারে এই জাতের পেঁয়াজের সরবরাহ কমতে শুরু করেছে। এ কারণে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। কৃষকেরা জানিয়েছেন, মাসখানেকের মধ্যেই প্রধান জাত হালি কাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করবে। তখন দাম আবার কমে আসবে। এক কেজি আলু ও পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ যথাক্রমে ১৫ টাকা ৯৫ পয়সা ও ২৩ টাকা ৮৭ পয়সা। অথচ হাতবদল হয়ে রাজধানীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার গুণ বেশি দামে। এটা কতটুকু যৌক্তিক, তা দেখার যেন কেউ নেই! গত বছর মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ মার্চে কৃষকরা প্রতিকেজি আলু বিক্রি করেছিলেন ২০ টাকার কমে। যদিও জুনের পর কৃষকের কাছে বীজ আলু ছাড়া অবশিষ্ট থাকে না কিছুই। তবে সিংহভাগই মজুত করেন হিমাগার মালিক, ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। জুনে আলু বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে জুনে ৮ শতাংশ, জুলাই ও আগস্টে ১০ শতাংশ করে, সেপ্টেম্বরে ২০ শতাংশ, অক্টোবরে ৩০ শতাংশ, নভেম্বরে ২০ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে ২ শতাংশ আলু হিমাগার থেকে বিক্রি হয়। কিন্তু ১৫ টাকা ৯৫ পয়সায় উৎপাদিত আলুর যেখানে সরকার নির্ধারিত মূল্য ৩৬ টাকা, সেখানে প্রতিকেজি আলু পাইকারিতেই বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। গত বছর সেপ্টেম্বরের ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় দেশীয় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো হয়। পুরোনো কায়দায় জনগণের পকেট কেটেছেন অনেকে। সংকট দেখিয়ে হালি পেঁয়াজের দাম ওঠে শতকের ঘরে। মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কম মূল্যে কৃষক থেকে পণ্য কিনে মজুত করেছেন। পরে তারা সেগুলো ধীরে ধীরে দাম বাড়িয়ে বাজারে ছাড়েন। এখন সময় শুধু মুড়িকাটা পেঁয়াজের। থাকবে আরও এক মাস। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে এক ক্রেতা বলেন, ২০ থেকে ২৫ টাকা মূল্যের পেঁয়াজের কেজি ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এটাই বাস্তব, কোনো মুখের কথা নয়। তা ছাড়া এখন যদি ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে থাকত তাহলে দাম কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকত।কৃষক পর্যায় থেকে খুচরা বাজারে আসতে কৃষিপণ্য তিন-চার হাত বদল হয়। এতে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের মূল্য তিন-চার গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে লাভের সব টাকা যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বলছে, এবার কৃষক পর্যায় থেকে বাজারের সাপ্লাই চেইন পর্যন্ত কাজ করবে তারা। একই সঙ্গে রমজানে কেউ যেন কারসাজি করতে না পারে, সেদিকে নজর থাকবে।সংস্থাটির মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন,পরিবহন সমস্যা। পণ্য পরিবহনে যে অতিরিক্ত খরচ পড়ছে। কৃষক থেকে শুরু করে মধ্যস্বত্বভোগীরা কী পরিমাণ লাভ করছে, আমরা সবস্তরে নজরদারি করছি। রমজানে যেসব পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে, আমরা বর্তমানে সেসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। সরকারি সংস্থার কড়া হুঁশিয়ারি আর বাজার মনিটরিং চলছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে কোনোভাবেই স্বস্তি পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। ক্রেতারা বলছেন, সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক রাখতে অসাধু চক্রকে দেওয়ানি ও ফৌজদারি শাস্তির আওতায় আনতে হবে।