ভারপ্রাপ্ত ভর করে চলছে ইবির আট দপ্তর
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নাজিম হোসেন ইবি
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ আট দপ্তরের কার্যক্রম চলছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে। ভারপ্রাপ্ত মানে কার্যক্রম স্থগিত না রেখে আপৎকালীন সময়টা চালিয়ে নেওয়া। কিন্তু ইবিতে এসব পদে বছরের পর বছর কোনও স্থায়ী কর্মকর্তা নিয়োগ না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত হিসেবে চলছে রেজিস্ট্রার, লাইব্রেরিয়ান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, চিফ ইঞ্জিনিয়ার, জনসংযোগ, অর্থ ও হিসাব, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন এবং শারীরিক শিক্ষা বিভাগ।
ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান। তিনি ২০২২ সালের ৩০ জুন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পান। আ. লতিফ ভারপ্রাপ্ত প্রধান লাইব্রেরিয়ান হিসেবে নিয়োগ পান একই বছর। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে ২০১৭ সালের ১ জুলাই আবুল কালাম আজাদকে ভারপ্রাপ্ত করে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এছাড়া ২০২২ সালের ৩০ জুন তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসাবে উপ-রেজিস্ট্রার ড. মো. আমানুর রহমানকে, অর্থ ও হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসাবে শেখ মো. জাকির হোসেনকে এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসাবে উপ-রেজিস্ট্রার ড. মো. নওয়াব আলীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। প্রকৌশল অফিসের প্রধান প্রকৌশলী একেএম শরীফ উদ্দীনকে ১৫ জুলাই থেকে প্রকৌশল অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
একইদিন শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জনাব শাহ আলম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সময়ের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাওয়ার কথা।
কিন্তু প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় উল্টো আরও পিছিয়ে যাচ্ছে।’ এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত থাকার কারণে তেমন কোন চাপে থাকতে হয় না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে এই পদে স্থায়ী নিয়োগ দিতে পারেন। প্রশাসনিক কার্যক্রম তার নিজ গতিতে চলছে। ‘এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভালোভাবে পলিচালনা করতে দপ্তরগুলোর স্বাধীনতা দিতে স্থায়ীকরণই করা প্রয়োজন। প্রশাসন স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়না। প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দপ্তরগুলোতে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে রাখে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ভাইস-চ্যান্সেলর একা চাইলেই তো আর সব পারে না। কিছু জায়গায় দক্ষ লোক পাওয়া যায় না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও এসব পদ ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে। আমি নীতিগতভাবে প্রশ্নটির সাথে একমত, তবে আমি ভারপ্রাপ্ত জায়গাগুলো পূরণ করার চেষ্টা করছি কিন্তু পেরে উঠছি না। আমি চেষ্টা করছি। সবগুলো পারব না তবে কয়েকটা দপ্তরে স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ করার চেষ্টা করব।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রশাসনের কাছে জিম্মি কি না এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চাপ আসলে নির্ভর করে ভারপ্রাপ্ত পদে যে আছে তার মনের জোরের উপরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপর বিন্দুমাত্র কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয় না। তবে চাপ যা থাকে তা তাদের ব্যক্তিগত। অনেকসময় কয়েকজনের কণ্ঠসাদৃশ্য কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পেপার কাটিংয়ে সংবাদ দেখা যায়, তখন তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হলে হয়তো তারা চাপে থাকে। এসব চাপ নির্ভর করে কর্মকর্তার মনের জোর, কর্মদক্ষতা ও সততায়।