মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গতকাল দুপুরে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে যান বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন ও বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন। পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সীমান্ত এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা করেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে কথা বলেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সাথে।
এ সময় বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন বলেন, সীমান্তে গত কয়েকদিন ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে পুলিশি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে এবং জোরদার করা হয়েছে। ঘুমধুমের সীমান্ত এলাকায় মর্টারশেলের আওয়াজ শোনা গেছে তাই এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে জনগণকে নিরাপদ রাখার জন্য সবরকম প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্তে শান্তি রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী সজাগ রয়েছে এবং বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে বিপজ্জনক এলাকায় বসবাসকারীদের প্রয়োজনে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে। এছাড়া অত্র এলাকায় বসবাসকারীদের আতঙ্কিত না হয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ প্রদান করেন তিনি। তিনি বলেন, ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র। পরিস্থিতি খারাপ হলে অবস্থা বুঝে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারি জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে থেমে থেমে সশস্ত্র যুদ্ধ চলমান রয়েছে। তাদের এই সমর যুদ্ধের গোলার শব্দ ও বিভিন্ন সময় নিক্ষিপ্ত গোলা তাদের সীমানা পেরিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী লোকালয়ে এসে পড়ছে। এতে নিত্যদিনের কাজে ও শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছেন অবিভাবকরা। সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারি দুপুরে কোনার পাড়া এলাকায় বিস্ফোরিত মর্টারশেলের খোসা পাওয়ার পর ৩০ জানুয়ারি দিন গত রাতে ঘোনার পাড়া এলাকায় মিয়ানমার থেকে নিক্ষিপ্ত অবিস্ফোরিত মর্টারশেল এসে পড়ে। এ নিয়ে স্থানীয়দের জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করলেও কোনো প্রকার হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মর্টারশেল বাংলাদেশের ভেতরে এসে পড়ে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ। ঘুমধুম পশ্চিম পাড়ার আবু সিদ্দিক জানান, দুপরের দিকে মর্টার সেল পড়ে বিকট শব্দ হলে এলাকার মানুষ আতংকে দিগি¦দিক ছোটাছুটি শুরু করে।
টেকনাফের দমদমিয়ার ও জাদিমোরার লাল দিয়ায় সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমার থেকে আবারও থেমে থেমে মর্টারশেল ও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে করে সীমান্তের এ পাড়ে বসবাসরত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গতকাল বুধবার ভোররাত ৩টা থেকে সকাল সাড়ে আটটা পযন্ত সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইনে মর্টারশেল ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তবে আগেরদিন মঙ্গলবার কোনোধরনের শব্দ শোনা যায়নি। এতে করে এ পারে বসবাসকারীদের আতঙ্ক কাটেনি। এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন হ্নীলা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী।
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্তে মর্টারশেল ও গুলির শব্দ ভেসে আসছে। এটি তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। তবে টেকনাফ সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যাতে এ সমস্যাকে কেন্দ্র করে নতুনভাবে কোনো ধরনের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কোনো সুযোগ না হয়।
হ্নীলা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ভোররাত ৩টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত উপজেলার দমদমিয়ার ও জাদিমোরার লাল দিয়ায় সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের জামবনিয়া, রাইম্মবিল, পেরাংপুরু ও কাইনবন্যা এলাকায় থেমে থেমে মর্টারশেল ও গোলাগুলি হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত রয়েছেন। সীমান্তে বসবাসকারীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়া নজরদারিতে রয়েছেন।
কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার : মিয়ানমারে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির পাশাপাশি টহল এবং নজরদারি জোরদার করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। কোস্ট গার্ডের টেকনাফ স্টেশনের কমান্ডার লে. কমান্ডার লুৎফুল লাহিল মাজিদ জানিয়েছেন, সম্প্রতি মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে অব্যাহত সংঘাত ও গোলাগুলির ঘটনায় আতংকে রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উপকূলের বাসিন্দারা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে মানব পাচার, চোরাচালান, মাদকদ্রব্যের অবৈধ অনুপ্রবেশসহ নতুন ভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। এপ্রেক্ষিতে সমুদ্রে সার্বক্ষণিক টহল জাহাজ মোতায়েনসহ টেকনাফ হতে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত দিন রাত নিয়মিত অত্যাধুনিক হাইস্পিড বোটের মাধ্যমে টহল পরিচালনা করছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। এছাড়াও টেকনাফ, শাহপরী, বাহারছড়া ও সেন্টমার্টিনে বর্তমানে অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেকোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং দেশের মানুষের জান মালের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বিধানে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদা প্রস্তুত রয়েছে।