পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রিফিং
সিরাজগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ত্রিপল মার্ডারের রহস্য উদ্ঘাটন, খুনি ভাগ্নে গ্রেপ্তার
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার চাঞ্চল্যকর ত্রিপল মার্ডার মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। মামার পাওনা ৩৫ লাখ টাকা দিতে না পেরে আপন ভাগ্নে রাজিব কুমার ভৌমিক (৩৫) এই ত্রিপল মার্ডার করে। নিষ্ঠুর এ ভাগ্নেকে গ্রেপ্তারসহ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রড ও হাসুয়া উদ্ধার করা হয়েছে। সে উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথের ছেলে। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হলরুমে গতকাল বুধবার বিকালে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, ভিকটিম বিকাশ চন্দ্রের বোন প্রমিলা রানীর ছেলে ত্রিপল কিলার রাজিব। তার বাবা মারা যাওয়ার পর ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারের সাথে যৌথভাবে খাদ্যশস্যের ব্যবসা করে আসছিলেন। মামা তাকে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা প্রদান করে। এ ব্যবসা চলমান অবস্থায় হত্যাকারী ভাগ্নে রাজিব মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেয়। এরপরেও মামা বিকাশ তার কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন এবং ৭-৮ দিনের মধ্যে টাকা দিতে চাপ দেয়া হয়। এ ঘটনায় ভাগ্নে রাজিব ও তার মাকে (ভিকটিমের বোন) ফোনে অনেক বকাবকি করে। এ টাকা ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হয় রাজিব এবং একপর্যায়ে মামার এমন বকাবকিতে ক্ষিপ্ত হয়ে মামাসহ পুরো পরিবারকে এই হত্যার পরিকল্পনা করে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত শনিবার বিকালে ভাগ্নে তার মামাকে ফোন করে পাওনা টাকা নিয়ে বাসায় আসার কথা বলে এবং মামা বাহিরে থাকায় টাকা নিয়ে সরাসরি তাড়াশ পৌর এলাকার মন্দির মহল্লায় ফ্ল্যাট বাসায় মামির সাথে সাক্ষাৎ করে বাসায় থাকতে বলে এবং ভাগ্নে মটোরসাইকেলযোগে একটি ব্যাগ নিয়ে ওই ফ্ল্যাট বাসার তৃতীয় তলার কক্ষে আসে। এ সময় মামি কফি খাওয়ানোর জন্য সন্ধ্যাকালীন পূজা শেষ করে বাসার নিচে দোকানে যান। এ সুযোগে ১০ম শ্রেণির স্কুলছাত্রী মামাতো বোন তুষিকে (১৫) ব্যাগে আনা লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাতের পর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরমধ্যে মামি স্বর্ণা রানী সরকার (৪০) কফি নিয়ে বাসায় আসলে তাকেও একই কায়দায় আঘাত করা হয় এবং অচেতন অবস্থায় মা ও মেয়েকে হাসুয়া দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। সন্ধ্যার পর মামা বিকাশ চন্দ্র সরকার (৪৮) বাসায় ঢুকলে তাকেও লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে মামা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং তাকেও হাসুয়া দিয়ে গলা কেটে হত্যা নিশ্চিত করে। তাদের লাশ ওই কক্ষের বেডের কাছাকাছি রেখে রুমে তালা দিয়ে মটোরসাইকেলযোগে খুনি ভাগ্নে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। রোববার সকালে বিকাশের রুমে তালা ঝুলানো দেখা যায়। পরিবারের লোকজন মনে করছিলেন তারা ঘরে তালা দিয়ে অন্যত্র কোথাও গেছেন। কিন্তু সোমবার দিনভর তাদের না পেয়ে তার বড়ভাই প্রকাশ চন্দ্র সরকারসহ তার আত্মীয়স্বজন ছোট ভাই বিকাশের পরিবারকে খুঁজতে থাকে এবং সোমবার গভীর রাতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে এ ঘটনা জানানো হয়। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে এসে ফ্ল্যাট বাড়ির কক্ষে ঝুলানো তালা কেটে মঙ্গলবার ভোর রাতে ওই ৩ জনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, পিবিআই, সিআইডি ও র্যাব কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। এ নির্মম ত্রিপল হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পুলিশের ডিবি পুলিশসহ একাধিক চৌকস টিম মাঠে নামে এবং মামার মোবাইলে ভাগ্নের সাথে টাকা নিয়ে উত্তেজিত অডিও উদ্ধার করা হয়। বিশেষ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে এ নির্মম ত্রিপল মার্ডারের খুনি ভাগ্নে রাজিবকে পুলিশ মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেফতার করে। তার দেয়া তথ্য ওইদিন বিকালে তাড়াশ বাজার এলাকার একটি পুকুর থেকে রড ও তার গ্রামের বাড়ি থেকে হাসুয়া উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তার ব্যবহৃত মটোরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার রাতে নিহত বিকাশের শ্যালক সুকোমল বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সামিউল আলম, সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত কুমার সূত্রধর, ওসি নজরুল ইসলাম, ওসি (ডিবি) জুলহাজ উদ্দিন ও অনান্য পুলিশ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।