খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান পরিষদের দ্বিতীয় সাধারণ সভা গতকাল সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় খুলনা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক মো: সিরাজুল ইসলাম, কেসিসি’র সাবেক কাউন্সিলর শেখ মোসারাফ হোসেন; কবি, উপন্যাসিক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর আবু বকর সিদ্দিক, সাবেক কৃতী ফুটবলার এসএম মনসুর আহম্মেদ ও সিনিয়র সাংবাদিক জ্যোতির্ময় মল্লিক-এর মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
সভায় কেসিসি’র স্থায়ী কমিটি গঠন, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের খসড়া বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদন ২০২২-২৩ অনুমোদনের লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভাপতির বক্তৃতায় সিটি মেয়র বলেন, কেসিসি’র বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে গেলেও বর্তমানে সেইসব প্রকল্পের কাজ গতিশীল করা হয়েছে। প্রকল্পসমূহের কাজ যথাসময়ে বাস্তবায়নের জন্য তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণকে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
কেসিসির মেয়র প্যানেলের সদস্য এসএম রফিউদ্দিন আহম্মেদ, এসএম খুরশিদ আহম্মেদ টোনা ও মেমরী সুফিয়া রহমান শুনু, কেডিএ’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম মিরাজুল ইসলামসহ কেসিসি’র কাউন্সিলর, সংরতি আসনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্মসচিব) লস্কার তাজুল ইসলাম।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিবিষয়ক কর্মশালা
এদিকে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি-২০২২ বিষয়ে এক অবহিতকরণ কর্মশালা গতকাল সকালে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) এ কর্মশালার আয়োজন করে। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মুখ্য আলোচক ছিলেন এনএসডিএ’র সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) মো: জোহর আলী। মুখ্য আলোচক তার বক্তৃতায় বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রচলিত পেশার অনেকগুলো গুরুত্ব হারিয়ে ফেলবে। আবার নতুন নতুন অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তরুণ জনগোষ্ঠীকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন সময়ের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। দক্ষতা প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে গেলে অদক্ষ মানুষের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বেতন পাওয়ার সুযোগ থাকে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিলে কর্মসংস্থান ব্যাংক হতে জামানতবিহীন ঋণ পাওয়া যায়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট বা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বোনাসকালের সুবিধা ভোগ করছে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট হলো কোনো দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা অর্থাৎ ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সি জনসংখ্যার অধিক্য। যখন এই কর্মক্ষম জনসংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বেশি থাকে, তখন ওই দেশ জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বোনাসকালে অবস্থান করছে বলে ধরা হয়। ইউএনডিপি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম জনশক্তি ১০ কোটি ৫৬ লাখ যা মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ। ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা হবে ১২ কোটি ৯৮ লাখ, আর ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা হবে ১৩ কোটি ৬০ লাখ। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ গঠন করা সম্ভব হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পুলক কুমার মন্ডলের সঞ্চালনায় কর্মশালায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার দপ্তরের উপ-পরিচালক মো: ইউসুপ আলী, সিভিল সার্জন ডাঃ মো: সবিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এসএম আল বেরুনী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মীর আলিফ রেজা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) আতিকুল ইসলাম ও এনএসডিএ’র উপ-পরিচালক আবু তাহের মো: সামসুজ্জামানসহ সরকারি কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি ও এনজিও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।