কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ জবির ডিজিটাল গ্রন্থাগার
* ৩০ হাজার বইয়ের বিপরীতে তালিকাভুক্ত বই তিনটি * গ্রন্থাগার উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের অনীহা
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাজেদুর রহমান, জবি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নায়ন ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসামগ্রী সহজলদ্ধ করতে লাইব্রেরি অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশন কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে ২০২১ সালে এ কমিটিব গঠন করা হয়। সেই কমিটি ডিজিটাল সফটওয়্যার তৈরির উদ্যোগ নেয়। প্রায় আড়াই বছর পর কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই উদ্বোধনের জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ। ফলে কোন বিশেষজ্ঞের সহায়তা ছাড়া গতানুগতিক এমন সফটওয়্যারটি ডিজিটালাইজেশনে কতটুকু ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে অনেকের মাঝে।
জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি- লাইব্রেরি ব্যবস্থা অটোমেশন করা, দেশি-বিদেশি লেখকের বই ও জার্নালের রিমোট এক্সেস সুবিধা নিশ্চিত করা। লাইব্রেরি ব্যবস্থার ক্যাটালগ পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত বই বা জার্নাল খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে। সর্বশেষ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক ২০২১ সালে দায়িত্বে আসার ৩ মাস পর লাইব্রেরি অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশন কমিটি গঠন করে দেন। কমিটিকে একটি প্রকল্প জমা দিতে বলা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম, সদস্য সচিব করা হয় গ্রন্থাগারিক মো. এনামুল হককে। এছাড়া সদস্য হিসবে আছেন কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু লায়েক, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জুলফিকার মাহমুদ, আইসিটি দপ্তরের সহকারী কম্পিউটার প্রোগ্রামার মো. নুহ আলম।
শুরুতে কমিটির সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার পরিদর্শনে যায়। গ্রন্থাগার সফটওয়্যার তৈরির জন্য পরে বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে কমিটির সদস্যরা। একটি মানসম্মত ও পূর্ণাঙ্গ সফটওয়্যার তৈরির জন্য বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৫ - ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত দাবি করে। কিন্তু প্রতিবার আর্থিক সংকটের কথা বলে প্রকল্পটি বাদ দেওয়া হয় বলে জানান গ্রন্থাগার অটোমেশন কমিটি। অবশেষে বাধ্য হয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও নামমাত্র মূল্যে ওয়েবসাইট তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। এক্ষেত্রে কমিটির সদস্য কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু লায়েক এর তত্ত্বাবধানে একই বিভাগের শিক্ষার্থীদের দিয়ে কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কিন্তু কমিটি গঠনের আড়াই বছর পার হলেও লাইব্রেরির জন্য একটি ওয়েব ঠিকানা তৈরি করা ছাড়া দৃশ্যমান কোন কাজ সম্পন্ন হয়নি। ডিজিটাল গ্রন্থাগার পরিচালনার জন্য নেই নিজস্ব কোন টেকনিক্যাল কর্মকর্তা। ওয়েবসাইটে বিচ্ছিন্নভাবে মোট ২৫-৩০ টি বই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যদিও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ৩০ হাজার বই রয়েছে। এছাড়াও জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রিসার্চ পেপার রয়েছে লক্ষাধিক।
এদিকে কোন বিশেষজ্ঞের সাহায্য ছাড়া তৈরি সফটওয়্যার কতটুকু ডিজিটালাইজেশন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই উদ্বোধনের জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে গ্রন্থাগারিক মো. এনামুল হক ও অটোমেশন কমিটি।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে গ্রন্থাগার অটোমেশন না হওয়ার জন্য গ্রন্থাগারিক এনামুল হকের অদক্ষতা ও দায়িত্বে অনীহাকে দায়ী করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রন্থাগারের কয়েকজন কর্মকর্তা। তাদের দাবি, বারবার কমিটি করে দিলেও কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি। এর আগে এনামুল হকের হস্তক্ষেপে গ্রন্থাগার পরিচালনার জন্য গ্রন্থাগার উপদেষ্টা কমিটি গঠনের প্রচেষ্টাও আলোর মুখ দেখেনি। গ্রন্থাগার অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশন কমিটি সূত্রে জানা যায়, ওপেন সোর্স জগতে গ্রন্থাগার বিষয়ক সফটওয়্যার ‘কোহা’ (ইন্টিগ্রেটেড লাইব্রেরি সিস্টেম), ‘ডি-স্পেস’ (ডিজিটাল রিপোজিটরি সফটওয়্যার) সিস্টেম চালু করতে তারা ইচ্ছুক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দেওয়ায় তারা কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন না।
‘কোহা’ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে সরাসরি নিজের প্রোফাইলে লগইন করতে পারবে। লগইনের পর অনুসন্ধান করে বই খুঁজে বের করা যাবে। ‘ডি-স্পেস’ সিস্টেমের মাধ্যমে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি বিভাগের গ্রন্থাগারের সাথে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সংযোগ স্থাপন করা হয়। ব্যবহারকারী কোনো বই ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করলে বইটি গ্রন্থাগারের কোন শেলফে আছে তা খুঁজে নেওয়া যাবে।
লাইব্রেরিতে নিয়মিত যাতায়াত করা ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর আনজুম বলেন, ক্যাটালগে দীর্ঘক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরও কাঙ্ক্ষিত বই পাওয়া যায় না। ক্যাটালগে থাকলেও আবার শেলফে থাকে না সে বই। অটোমেশন সিস্টেম চালু করলে আমাদের পড়াশোনায় সুবিধা হত। এ বিষয়ে জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, কাজ অসম্পূর্ণ রেখে অটোমেশন সফটওয়্যার উদ্বোধন কোনোদিনই কাম্য নয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার জন্য গ্রন্থাগার অটোমেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে গ্রন্থাগারিক মো. এনামুল হক বলেন, আমরা ফান্ড সংকটের কারণে অটোমেশনের কাজ চালিয়ে নিতে পারছি না। তাই আমরা কাজ অসম্পূর্ণ রেখে উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উপাচার্য সময় দিলেই উদ্বোধন করা হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানি না। তবে তাদের সাথে বসে কী পরিমাণ ফান্ড দরকার তা জানার চেষ্টা করব।