ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরুর পর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৭ হাজার ১৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায় নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ইসরায়েলের হামলায় অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে অন্তত ৬৬ হাজার ১৩৯ জন আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে গাজা কর্তৃপক্ষ। এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিম তীরের জেনিন, নাবলুস ও হেব্রন শহরে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তিনটি শহরেই বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এর মধ্যে জেনিনের শরণার্থী ক্যাম্পে সশস্ত্র সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে নাসের ও আল-আমাল হাসপাতালের কাছে তুমুল লড়াই চলছে। এতে প্রাণ সংশয়ে পড়েছেন হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাসেবা কর্মী, রোগী এবং আশ্রিত বাস্তুচ্যুত মানুষরা। উভয় হাসপাতালেই তীব্র অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত ৩১ জানুয়ারি বিকাল থেকে ১ ফেব্রুয়ারি বিকাল পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ১৯০ জন আহত হয়েছেন। চলমান সংঘাতের মধ্যেই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। সম্প্রতি উত্তর গাজার হামাদ স্কুলের কাছে ‘কালো প্লাস্টিকের ব্যাগে’ অন্তত ৩০টি মরদেহ পাওয়া যায়। তাদের ইসরায়েলি বাহিনী হত্যা করে গণকবর দিয়েছে বলে দাবি করেছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, নিহতদের চোখ বেঁধে নির্যাতন ও হত্যা করে ব্যাগে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর গত প্রায় চার মাসের অভিযানে নিহত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার হামাস যোদ্ধা। সেই সঙ্গে আহতও হয়েছেন প্রায় সমসংখ্যক যোদ্ধা। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ‘খান ইউনিসে আমাদের অভিযান সফল হচ্ছে। এছাড়া শিগগিরই আমাদের সেনারা রাফায় পৌঁছাবে এবং সন্ত্রাসীদের আস্তানাগুলো ধ্বংস করবে।’
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।
বস্তুত, ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত মানবিক বিরতির সাত দিনে মোট ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকি ১৩২ জন এখনও তাদের হাতে আটক রয়েছে।
গাজায় অব্যাহত হামলা পুরো অঞ্চলের জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, শিগগির গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না হলে আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়বে। এদিকে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, খান ইউনিসে আল-আমাল হাসপাতালে অভিযান পরিচালনাকালে ব্যাপক গুলি চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজাবিষয়ক ইউএনআরডব্লিউএ-এর পরিচালক টমাস হোয়াইট বলেছেন, আমরা একটি ক্লিনিক ও আশ্রয়কেন্দ্র হারিয়েছি। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের অস্থায়ী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি অবশ্যই প্রয়োজন।