ত্রিমুখী সংকটে চলছে জবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত নামমাত্র কয়েকটি বই
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাজেদুর রহমান, জবি
শিক্ষার্থীদের আসন স্বল্পতা, বাজেট স্বল্পতা, দক্ষ লোকবলের অভাব ও পর্যাপ্ত বইয়ের সংকটের মধ্যদিয়েই চলছে এ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় এ গ্রন্থাগারে আগে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বই নিয়ে প্রবেশের অনুমতি ছিল না, যার ফলে বেশিরভাগ সময়ই শিক্ষার্থী শূন্য থাকত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নিজস্ব বই নিয়ে লাইব্রেরি প্রবেশের অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের আগমন বাড়তে থাকে লাইব্রেরিতে। ফলে বাড়তে থাকে আসন সংকট। শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরিতে এসে জায়গা না পেয়ে ফিরে যান অনেকেই।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সূত্রে জানা যায়, এখানে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এছাড়া বিভিন্ন জার্নাল ও রিসোর্সের সফট কপি রয়েছে লক্ষাধিক। প্রয়োজনের তুলনায় যা অপর্যাপ্ত। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় বই খুঁজে পান না। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ব্যবস্থার ক্যাটালগ পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত বই বা জার্নাল খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। জানা যায়, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের জন্য ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে লাইব্রেরি অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশনের কাজ শুরু হয়। এ কাজের জন্য একটি কমিটিও গঠন করে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক। কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও এআইইউবিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার পরিদর্শন করেন। গ্রন্থাগার সফটওয়্যার তৈরির জন্য পরে বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কমিটির সদস্যরা। তবে পর্যাপ্ত বাজেট সংকটে এ কাজ খুব বেশি এগোয়নি। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও নামমাত্র মূল্যে ওয়েবসাইট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে লাইব্রেরির একটি ওয়েবসাইট তৈরি ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি। ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত রয়েছে নামমাত্র কয়েকটি বই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের লাইব্রেরিতে বইও সংকট আসনও সংকট। পড়াশোনার জন্য সুষ্ঠ পরিবেশ নেই। ই-লাইব্রেরি অবস্থাও ভালো না। বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে লাইব্রেরিতে আরো নজর দিতে। আমরা চাই ববর্ধিত পরিসরে লাইব্রেরি আরো সমৃদ্ধশালী হোক।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রান্থাগরিক এনামুল হক বলেন, আমরা অটোমেশনের চালু করলে আমাদের এ বিষয়ে আইটি এক্সপার্ট প্রয়োজন। আমরা যদি লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার চালু করি তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের বই গ্রন্থাগারের কোথায় আছে বা পর্যাপ্ত বই আছে কি না, তা ওয়েবসাইটে লগইন করেই দেখতে পাবে। এখানে বিভিন্ন বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিও যুক্ত করা পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। কিন্তু আমাদের এক্ষেত্রে কোনো দক্ষ লোকবল নেই। আমরা অটোমেশন চালু করার পর সেটা মেইনটেনেন্সের প্রয়োজন। নাহলে কখনো যদি সাইট ক্রাশ করে বা অন্যান্য সমস্যা হয়, তাহলে টেকনিক্যাল সাপোর্টের অভাবে ডাটা হারিয়ে ফেলতে পারি।
তিনি আরো বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারের জন্য আলাদা একটা ভবন থাকে। আমাদের তা নেই। নতুন ক্যাম্পাস হলে সেখানে এই সংকট আর থাকবে না। পর্যাপ্ত বই না থাকার বিষয়ে এ গ্রন্থাগারিক বলেন, বিভিন্ন বিভাগ তাদের নিজস্ব বই অনেক সময় গ্রন্থাগারে দিয়ে যায়। ৩০ হাজারের মতো বই রয়েছে। এছাড়া আমাদের ইউজিসি থেকে কেনা ৬ হাজারের মতো সফটকপি আছে। বাইরের বিভিন্ন সংস্থার দেয়া বিভিন্নসহ লক্ষাধিক জার্নাল ও পেপারের সফটকপির এক্সেস রয়েছে। যদিও আমাদের গ্রন্থাগারে যে বই আছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যাপ্ত এটা বলা যাবে না। এক্ষেত্রে ফান্ডের সংকট একটা বড় বাধা আমাদের। পর্যাপ্ত ফান্ড পেলে হয়তো আমরা বইয়ের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব। এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য আমরা উপাচার্য মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি আমাদের সঙ্গে একদিন বসবেন বলেছেন আমরা তাকে বিস্তারিত জানাব। তিনি আশা করি ব্যবস্থা নেবেন। সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।