সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় এমপিওভুক্তিতে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েও নাম না থাকায় হার্ট অ্যাটাকে স্কুল শিক্ষিকা রোকেয়া বেগমের (৪৭) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তিনি ওই উপজেলার গোদাগাড়ী চকপাড়া গাড়াবের বহুমুখী হাই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা। অবশেষে এ ঘটনায় আগামী তিন দিনের মধ্যে ওই শিক্ষিকার পরিবারকে প্রায় ৪ লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে এবং তদন্তসাপেক্ষে শিক্ষা বিভাগে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পার্শ্ববর্তী বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভুদমারি গ্রামের শিক্ষক আব্দুল করিম বাদশার স্ত্রী রোকেয়া ২০০৪ সালে এই স্কুলে ইংরেজি শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। তার যোগদানের আগে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি উন্নয়নের নামে রোকেয়া ও তার স্বামীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয় এবং পরে তাকে সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে দেখানো হয়। ২০২২ সালের জুনে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয় এবং এ এমপিওভুক্তিতে তার নাম থাকার জন্যও টাকা নেয়া হয়। এমপিওভুক্তির পর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা এলেও ওই শিক্ষিকার বেতন ভাতা আসেনি। পরবর্তীতে ওই শিক্ষিকা রোকেয়া রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডসহ অনান্য স্থানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার নাম এমপিওভূক্তি হয়নি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম নাকি ব্যবস্থাও নিচ্ছিলেন। কিন্তু ২০২৩ সালেও তার বেতন ভাতা আসেনি। এ কারণে মানসিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। গত মাসের ২৯ জানুয়ারি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে তিনি মারা যান। পরদিন স্বজনরা টাকা ফেরতের দাবিতে শিক্ষিকার মরদেহ নিয়ে ওই বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ করেন। ওই স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক উন্নয়নের নামে দফায় দফায় প্রায় ১০ লাখ টাকা নেয়। এমপিওভুক্তিতে তার নাম না থাকা ও টাকা ফেরত না পাওয়ায় হার্ট অ্যাটাক করে রোকেয়া মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। গতকাল দুপুরে এ প্রতিবেদক ওই স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে না পেলেও কথা হয় সহকারী প্রধান শিক্ষিকা মিনারা জান্নাত ও শরীর চর্চা শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের সাথে। তারা এসব তথ্যের আংশিক স্বীকার করে বলেন, ওইদিন স্কুলে শিক্ষিকার মরদেহ নিয়ে স্বজনরা বিক্ষোভকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তারা স্কুলে আসেন এবং তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এক আলোচনায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা তাকে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন ওই স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে। এ নির্দেশ মোতাবেক আগামী ৩ দিনের মধ্যে এ টাকা ফেরত দেবে কমিটি। এ বিষয়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ও সভাপতি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলুকে একাধিক ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। কাজিপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মজিদ এসব তথ্য স্বীকার করেছেন এবং এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি করার কথাও বলেন তিনি। কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহরাব হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এ বিষয়ে ওই স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে এবং আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার সময় দেয়া হয়েছে এবং এ ঘটনা তদন্ত-সাপেক্ষে শিক্ষা বিভাগে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।