রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় নয়, সম্পত্তির বিরোধেই খুন হন কাজিমুদ্দিন
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
ঢাকার আশুলিয়ায় ঠিকাদার ও ডেইরি ফার্মের মালিক কাজিমুদ্দিন সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে খুন হননি; বরং পৈতৃক সম্পত্তির বিরোধের কারণে তাকে খুন করে তার আপন ভাতিজা। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকার আশুলিয়ায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় এই ক্লুলেস ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের হত্যাকারী মোহাম্মদ আবদুল লতিফ খাঁনকে (৩২) আটক করে। আটক আসামি নিহত কাজিমুদ্দিনের বড় ভাই মৃত আলী মোহাম্মদ খাঁন এর ছেলে। সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী নিহত কাজিমুদ্দিনের হত্যাকাণ্ডের পর ভিকটিমের আত্মীয়স্বজন এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের একটি ধারণা ছিল এই হত্যাকাণ্ডটি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে হয়েছে। তারা অনেকেই মিডিয়াতে বক্তব্য দিয়েছিলেন যে, সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভিকটিমের সমর্থনের যে বিষয় ছিল সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করা হতে পারে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডটি নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতা হিসাবেও উপস্থাপন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের আসামি শনাক্ত করার জন্য র্যাব ফোর্সেস তাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল আশুলিয়া থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামি লতিফকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়। এ সময় গ্রেফতারকৃত লতিফের কাছ থেকে ভিকটিমের মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করে র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানতে পারে, এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কোনো রাজনৈতিক কারণ কিংবা নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা নয়; মূলত পারিবারিক বিরোধ এবং পৈতৃক সম্পত্তির ভাগাভাগির বিষয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। গ্রেফতারকৃত লতিফ ভিকটিমের আপন বড় ভাইয়ের ছেলে। লতিফের পিতা বেশ কিছুদিন আগে মারা যান। এরপর থেকে তিনি তার চাচাদের সাথে বসবাস করে আসছিলেন। বিভিন্ন সময় তাদের পৈতৃক সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে তার চাচাদের সাথে বাকবিতণ্ডা ও আলোচনা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভিকটিমের সাথে লতিফের বেশ কয়েকবার সম্পত্তি বুঝিয়ে দেয়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। যার পারিপ্রেক্ষিতে মূলত আসামির মধ্যে ক্ষোভ জন্ম নিতে থাকে।
হত্যাকাণ্ডটি ঘটে গত ৬ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে। ওইদিন ভিকটিম তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে রাতের বেলা তার বাড়ি থেকে আনুমানিক পাঁচশ’ মিটার দূরে তার খামার লিপি ফার্মে যান। নতুন একটি বাছুর জন্ম নেয়ায় সেটার দেখাশুনা করে তার স্ত্রী এবং সন্তান বাড়িতে ফিরে যান। নিহত কাজিমুদ্দিন তার খামারের বিশ্রামাগারে অবস্থান নেন।
হত্যাকারী লতিফ ওই রাতে চাচা কাজিমুদ্দিনের সাথে দেখা করতে গেলে তাদের ভেতর আলাপচারিতায় পুনরায় সম্পত্তির ভাগাভাগির বিষয়টি উঠে আসে। এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে আসামি ওই বিশ্রামাগারে থাকা একটি বঁটি দিয়ে কাজিমুদ্দিনের গলায় কোপ দেন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়ে আসামি আব্দুল লতিফ ভিকটিমের কাছে থাকা মোবাইল ফোন এবং সেখানে থাকা এই রুমের তালা ও চাবি নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মানুষ যাতে তাকে সন্দেহ করতে না পারে এজন্য সে বাহির থেকে রুমে তালা দিয়ে পাশের রুমে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বঁটিটি রেখে আত্মগোপনে চলে যায়।
হত্যাকাণ্ডের পরের দিন গত ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে খামারের রাখাল এসে রুমটি তালাবদ্ধ পায়। কিন্তু ওই রুমে থাকা গবাদি পশুর ঔষধের প্রয়োজনে সে নিহতের স্ত্রীর কাছে থাকা তালার দ্বিতীয় চাবির জন্য তার সাথে যোগাযোগ করে। তিনি এসে রাখালকে চাবি দিলে সে দরজা খুলে ভিতরে ভিকটিমের গলাকাটা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে। পরবর্তীতে সে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায়। তার তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সিসি টিভির ফুটেজ অ্যানালাইসিস করে আসামি আব্দুল লতিফকে শনাক্ত এবং পরবর্তীতে আশুলিয়ায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আটক করে। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আল মঈন।